বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছে, দরজা–জানালার আজ আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বিশাল বাড়ি এখন যেন অস্তিত্ব হারানোর প্রহর গুনছে।
উত্তর ২৪ পরগণার গোপালনগরের চৌবেড়িয়া, নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের বসতভিটে। ১৮৩০ সালে চৌবেড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সামাজিক নাট্য রচনার পথিকৃৎ দীনবন্ধু মিত্র। তাঁর প্রথম নাটক নীলদর্পণ প্রকাশ হয় ১৮৬০ সালে। চৌবেড়িয়ার এই বাড়িতে বসেই নাটকের বেশ কিছু অংশ লিখেছিলেন তিনি। সাহিত্য প্রেমীদের আক্ষেপ, বাংলা সাহিত্যকে তিনি সৃষ্টি দিয়ে ভরিয়ে দিলেও বর্তমান স্কুলের সিলেবাসে নেই দীনবন্ধু মিত্রের নাম। তাই নতুন প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়েরা জানেই না দীনবন্ধু মিত্রের কথা।
২০১১ সালে ২৬ মার্চ, তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করে। ২০১৬–১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের পক্ষ থেকে বাড়িটি পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু তারপরও বাড়িটি সংস্কার হয়নি। এখন কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে এই বাড়িটি। বাড়িটিকে দখল করেছে জংলী গাছ আর বিষাক্ত সাপেরা। তবু আজও বহু পর্যটক আসেন এই বাড়িটি দেখতে।
পরিবারের দাবি, একাধিকবার আবেদন করা সত্ত্বেও সংস্কারে উদ্যোগ নেয়নি সরকার। জরাজীর্ণ সেই বাড়ির সামনে বসানো হয়েছে নাট্যকারের একটি আবক্ষ মূর্তি। পরিবারের আক্ষেপ, দীনবন্ধু মিত্রের জন্মদিন বা মৃত্যুদিনে তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তরের পক্ষ থেকে একটা মাল্যদান পর্যন্ত করা হয় না এই মুর্তিটিতে।
এই বাড়িটির পাশেই বসবাস করেন নাট্যকারের পরিবারের চতুর্থ পুরুষরা। দীনবন্ধু মিত্রের প্রপৌত্র সঞ্জিত মিত্র বলেন, “বাড়ি সংস্কার তো হয়নি। জন্মদিন–মৃত্যুদিনে নাট্যকারের মূর্তিতে মালা পর্যন্ত কেউ দেন না। এমনকী মহকুমা তথ্য-সাংস্কৃতিক দফতরের পক্ষ থেকেও মূর্তিতে মালা দেওয়া হয় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আমরা আস্থাশীল। তাঁর কাছে অনুরোধ, তিনি যেন বাড়িটি সংস্কারে উদ্যোগ নেন।”