বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতে রেল ইঞ্জিনের রকমফের

ট্রেনে চড়েননি এমন মানুষ হয়তো খুঁজেও পাওয়া যাবে না। দূরপাল্লার ট্রেনের কু ঝিকঝিক শব্দ, বহু মানুষের কানে মধুর ধ্বনিতে ধ্বনিত হয়। সেই শব্দের উৎস রেল ইঞ্জিন সম্পর্কে খোঁজ রাখেন খুব অল্প কিছু মানুষ। আসুন আজ আমরা জানি ভারতীয় রেলে ব্যবহৃত বিভিন্ন রেল ইঞ্জিন সম্পর্কে।

ভারতে যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলে দুই ধরণের ইঞ্জিনে। ইলেকট্রিক ও ডিজেল চালিত ইঞ্জিন। অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন, ইঞ্জিনগুলির চেহারা, আকার এবং রঙের রকমফের আলাদা আলাদা। এর অর্থ রেল ইঞ্জিনগুলির শক্তি ও ক্ষমতা আলাদা। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন বিভিন্ন ইঞ্জিনের গায়ে ইংরেজিতে অক্ষর ও নম্বর সহ একটি কোড লেখা থাকে, যেমন WAP7, WAG7, WDP4, WDG4 বা WDM3A প্রমুখ। এই কোডগুলির মধ্যেই লুকিয়ে আছে ইঞ্জিনগুলির প্রকারভেদ এবং শক্তি।

ভারতে যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য আলাদা আলাদা ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ যে ইঞ্জিন যাত্রীদের ট্রেন টানে, সেগুলি মালগাড়িতে ব্যবহার হয় না। তবে কিছু ব্যতিক্রমও আছে। ইংরেজিতে লেখা তিনটি অক্ষরের শেষ অক্ষরটি জানিয়ে দেয় ইঞ্জিনটি যাত্রীবাহী নাকি পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য। যেমন WAP7, এর শেষের অক্ষর P অর্থাৎ প্যাসেঞ্জার ট্রেনের কোড। একইভাবে WAG7 এর ক্ষেত্রে শেষের অক্ষর G হল গুডস বা পণ্যবাহী ট্রেনের কোড। এবার আসি কোডের শেষে থাকা নম্বর প্রসঙ্গে। WAP4, WAP5 WAP7 অর্থাৎ ইঞ্জিনগুলির সিরিজ বোঝানো হচ্ছে। একই ধরণের রেল ইঞ্জিনের পরিমার্জিত রূপ (Upgraded Version)।

এবার আসি অন্য একটি প্রকারের রেল ইঞ্জিন প্রসঙ্গে। ডিজেল ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে হয়তো লক্ষ্য করেছেন কিছু কোড WDM3 এরকম লেখা হয়েছে। এই কোডের শেষের অক্ষর M অর্থে বোঝানো হয় Mixed Traffic বা মিশ্র ব্যবহারিক। অর্থাৎ এই ইঞ্জিনগুলি যাত্রী ও পণ্যবাহী দুটি ট্রেনেই ব্যবহার করা যায়। ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে একসময় WAM সিরিজ ছিল, কিন্তু এখন খুব অল্প ইঞ্জিনই ভারতীয় রেলে সচল আছে। কারণ এই ইঞ্জিন উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী রেল ইঞ্জিনের মধ্যে পার্থক্য তার শক্তি ও গঠনে। পণ্যবাহী ইঞ্জিনকে কয়েকশো টন ভার বহন করতে হয়। তাই এই ইঞ্জিনের শক্তি ও ক্ষমতা (Horsepower) স্বাভাবিকভাবেই বেশি। এর গঠনশৈলীও আলাদা। এর চাকার গঠন (Wheel Base) এবং এক্সেল একটু বড় হয় ভার বহনের জন্য। যাত্রীবাহী রেল ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে এগুলি সামান্য ছোট হয়। এছাড়া ক্ষমতা বা Horse power দিয়েও আলাদা করা যায় রেল ইঞ্জিনগুলিকে।

এছাড়াও আরেকটি কোড লেখা থাকে ইঞ্জিনগুলির গায়ে। সেটা হল ওই ইঞ্জিনটির ডিপোর কোড। অর্থাৎ ওই ইঞ্জিনটি কোন ডিভিশনের এবং কোথায় এর রক্ষণাবেক্ষণ হবে সেটা। যেমন SDAH, HWH, MLDT, CNB, GZB ইত্যাদি। এর থেকে বোঝা যায় ইঞ্জিনটি শিয়ালদা, হাওড়া, মালদা, কানপুর নাকি গাজিয়াবাদ ডিভিশনের।