স্বাস্থ্য

সেলফ আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের পার্থক্য

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বেশকিছু শব্দ বা শব্দবন্ধ পরিচিত হয়ে উঠেছে। আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন, সামাজিক দূরত্বসহ আরো কিছু শব্দ প্রতিদিনই শোনা যাচ্ছে। অবশ্য এমন নয় যে এগুলো নতুন। বহুদিন ধরে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এসব শব্দের ব্যবহার হয়েছে, যা এখন মহামারী পরিস্থিতিতে আবারো নতুন করে সামনে এসেছে। তবে এর মাঝে যে দুটি শব্দ খুব বেশি প্রচলিত, তা হচ্ছে সেলফ আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন। কাছাকাছি মনে হলেও এ দুটির অর্থ ও ব্যবহারে ভিন্নতা রয়েছে।

কভিড-১৯ বা নতুন এই নভেল করোনাভাইরাস মূলত সংক্রামক রোগ, যা কিনা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে। যে কারণে রোগের বিস্তৃতি ঠেকাতে আক্রান্ত রোগীকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখতে হয়। এমনকি আক্রান্ত হননি কিন্তু ঝুঁকিতে আছেন, এমন মানুষকেও আলাদা করে রাখতে হয় সংক্রামক এই রোগের বিস্তৃতি থামাতে। এ পরিস্থিতিকে বোঝাতেই ব্যবহার করা হয় সেলফ আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন শব্দ দুটি।

সেলফ আইসোলেশন
হাসপাতাল কিংবা ঘরে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখার নামই হলো আইসোলেশন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ক্রুটিকা কুপালি বলেন, আইসোলেশন হচ্ছে সেই পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালের কোনো কামরায় আইসোলেটেড করে রাখা হয়। তবে বর্তমান সময়ে কভিড-১৯-এর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোয় উপচে পড়া ভিড়। যে কারণে অনেক রোগীকে নিজ বাসাতেই সেলফ আইসোলেটেড থাকতে হচ্ছে।

অনেক শহরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাই জনসাধারণকে আহ্বান করছেন, যদি তারা করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন হন, তবে যেন নিজেদের সেলফ আইসোলেটেড করে রাখেন। নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদেরকে সেই আইসোলেশন চালিয়ে যেতে হবে। ওষুধ ছাড়া তিনদিন জ্বরবিহীন থাকার পর তারা আইসোলেশনমুক্ত হবেন। এছাড়া আক্রান্ত কিন্তু কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি, তাদেরকেও ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে।

অন্যান্য ভাইরাসের চেয়ে কভিড-১৯-এর উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, নতুন করোনাভাইরাসে অনেক সময় লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যে কারণে শনাক্ত হওয়ার আগেই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তাই কে ভালো এবং কে সুস্থ, তা নির্ণয় করা কঠিন হচ্ছে।

কোয়ারেন্টিন
কোয়ারেন্টিনের ধারণা বেশ পুরনো। এর আগেও অনেক সংক্রামক মহামারী ব্যাধিতে কোয়ারেন্টিনের ধারণা প্রচলিত ছিল। ১৪শ শতকে ইতালিতে প্লেগের সময় এর ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় একটি জাহাজকে তীরে ভিড়তে না দিয়ে ৪০ দিন সমুদ্রে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।

মূলত আক্রান্ত নন কিন্তু ঝুঁকিতে আছেন কিংবা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, এমন মানুষকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনকালে তাদের মাঝে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা, তাও পর্যবেক্ষণ করা হয়। অনেক সময় একাধিক ব্যক্তি বা একদল মানুষকে একসঙ্গে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিন পিরিয়ড ধরা হয়েছে ১৪ দিন।

মহামারীর ক্ষেত্রে অসুস্থ রোগীকে আইসোলেশনে পাঠানো এবং সম্ভাব্য আক্রান্তদের কোয়ারেন্টিন করার মধ্য দিয়ে রোগের সংক্রমণের বিস্তার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।