নির্ভয়া কাণ্ডে শিক্ষা হয়নি। আবারও লজ্জায় মুখ ঢাকল দিল্লি। এবার ৯ বছরের দলিত নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল নয়াদিল্লি। আজ সকালেই নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি জানান, ওই পরিবারের পাশে থাকবেন তিনি। নিগৃহীতার পরিবারকে হুমকি দিয়ে পুলিশকে না জানিয়ে হামলাকারীরা দেহটি দাহও করে দেয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত রাজধানী।
সোমবার অভিযোগ ওঠে, ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে এবং পরিবারের না জানিয়েই দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। রাজধানী উত্তাল এই ঘটনার জেরে। ওল্ড নাঙ্গাল গ্রামে খুন করার পর নির্যাতিতার পরিবারকে চাপ দিয়ে দেহ দাহ করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক পুরোহিত ও শ্মশানের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামেন এলাকার বাসিন্দারা।
মঙ্গলবারই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে টুইট করে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি নিগৃহীতা মেয়েটিকে ‘দেশের কন্যা’ বলে উল্লেখ করেন। হিন্দিতে করা ওই পোস্টে তাঁকে লিখতে দেখা যায় ‘দলিতের সন্তানও এই দেশেরই মেয়ে।’ রবিবার দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলের পুরানা নঙ্গল এলাকার বাসিন্দা ওই দলিত নাবালিকাকে একটু ঠাণ্ডা জল আনতে পাশেরই একটি শশ্মানে পাঠায় পরিবারের লোকজন। কিন্তু বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও ফিরে আসেনি ওই নাবালিকা। এরপরই এক প্রতিবেশী নাবালিকার মা’কে ডেকে মেয়ের অর্থদগ্ধ দেহটি দেখান।
এই বিষয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বিচার ছাড়া আর কিছুই চান না। তাঁদের দাবি, কোনও সুবিচার হয়নি এবং সহযোগিতা করা হচ্ছে না। আমি তাঁদের পাশে রয়েছি। যতক্ষণ না তাঁরা বিচার পাচ্ছেন রাহুল গান্ধী তাঁদের পাশে রয়েছেন।’ পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তরা হলেন শ্মশানের এক পুরোহিত নাম রাধে শ্যাম। তাঁর সহযোগী ছিলেন কুলদীপ কুমার (৬৩), লক্ষ্মী নারাইন (৪৮) এবং মহম্মদ সেলিম (৪৯)।
ময়নাতদন্ত না করার জন্য জোর দিয়ে ওই পুরোহিত রাধেশ্যাম বালিকার পরিবারকে বলে, ময়নাতদন্তের সময় শরীর থেকে অঙ্গ চুরি করে নেওয়া হয়। তাই কোনওভাবে পুলিশকে না জানিয়ে দেহ দাহ করে দেওয়ার জন্য পরিবারের উপর চাপ দেওয়া হতে থাকে। এবং একপ্রকার জোর করেই দেহটি দাহ করে দেওয়া হয়। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও জানিয়েছেন তিনি ওই নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন এবং আইনি লড়াইয়ে সাহায্য করবেন। ইতিমধ্যেই দলিত নেতা তথা ভীম সেনার প্রধান শেখর আজাদ নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। নাঙ্গাল গ্রামে আন্দোলনেও তিনি যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী-সমস্ত নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সকলেই এখানে থাকেন। তবুও নারী সুরক্ষা নেই কেন? এখনও অবধি মুখ্যমন্ত্রী দেখা করতে আসেননি কেন?’
স্থানীয় জনতা এলাকায় অবস্থান বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে টুইট করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এই ঘটনা নিয়ে দিল্লি পুলিশের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তুলোধনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরায় গিয়ে তাঁর ট্যুইট, ‘দেশের রাজধানীতে, একটি নয় বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে, জোর করে দাহ করে দেওয়া হয়েছে। এই দেশের তফশিলি উপজাতির মেয়েদের রোজ যে ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তাতে বোঝা যায় আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সত্যিই কতটা অসংবেদনশীল। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার মুখে। সম্প্রতি যিনি দিল্লির পুলিশ কমিশনার হয়েছেন, অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ সেই রাকেশ আস্থানা কি এর মধ্যেই নিজের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন? নাকি আসলে তাঁকে অন্য কোনও কাজের দায়িত্ব দিতেই আনা হয়েছে?’