দেশ ব্রেকিং নিউজ

প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দক্ষিণেশ্বরের ছবি

বিজেপি’‌র বিরুদ্ধে আক্রমণের তৃণমূল একাধিকবার সামনে এনেছে বহিরাগত তত্ত্ব। দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের ছোট–বড় নেতা সবাই বিজেপি’‌র বিরুদ্ধে বহিরাগত তত্ত্ব সামনে রেখে তোপ দেগেছে। আর নিজেকে বাঙালি কেন্দ্রিক দল প্রমাণে মরিয়া গেরুয়া শিবিরও। এবার প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেও কি তেমন কিছু প্রমাণ করার চেষ্টা হল? এই প্রশ্ন উঠছে কারণ, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বৈঠকে জায়গা পেয়েছে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের ছবি।
দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ধুন্ধুমার ঘটে গিয়েছে। যার জল গড়িয়েছে দিল্লি পর্যন্ত। কিন্তু এসবের মধ্যেই যে টিকে থাকতে হবে, সেই পরামর্শই মোদী বাংলার ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। কনভয়ের উপর হামলার ঘটনার খোঁজ নিতেই তিনি নাড্ডা–কৈলাসকে ফোন করেছিলেন। তখনই কৈলাসকে তিনি বার্তা দিয়েছেন, লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কোনওভাবেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে চলবে না। শুধু দলকে বার্তা দেওয়া নয়, তিনি নিজে যে সেই কাজ লাগাতার করে যাবেন সেই উদাহরণও প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিকালের প্রায় প্রতিটি কর্মকাণ্ডেই উঠে এসেছে। যার নজির এই দক্ষিণেশ্বরকে কাজে লাগানো।
এতদিন সেখানে থাকত জাতীয় পতাকা। এবার প্রোটোকল ভেঙে সেখানে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের ছবি দেখা গেল। বিজেপির দিকে বহিরাগত বলে যে আঙুল তোলা হচ্ছে, তার পালটা কোনও প্রচার নয়। বরং বিষয়টিকে ‘গুরুত্বহীন’ করার জন্য পাত্তা না দিয়ে বাঙালির মনের কাছাকাছি পৌঁছনোর দিকে নজর দেওয়ার উপরেই জোর দিয়েছেন মোদী। উজবেকিস্তানের সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কোনওরকম যোগসূত্র নেই। আচমকা জাতীয় পতাকার বদলে মন্দিরে ছবি কেন রাখা হল প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে টুইট করে রাজ্য বিজেপি। সেখানে তারা বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। সম্প্রতি দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে তিনি পুজোও দেন।
তৃণমূল তাদের ‘দিল্লির দল’ বলে যতই প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করুক বিজেপি যে বাঙালির কথা ভাবে, এই বিষয়টি তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক পদক্ষেপ করছেন। দলকেও সেই রাস্তাতেই হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন। রেডিওতে নিজের ‘মন কি বাত’ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর প্রায় সমস্ত ভাষণেই বাংলার মনীষীদের উল্লেখ। বৃহস্পতিবার সংসদের নতুন ভবনের উদ্বোধনের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিবেকানন্দ স্মরণের পরেই এদিন ইন্দো–উজবেকিস্তান ভার্চুয়াল সামিটে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাকড্রপ হিসেবে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীর মন্দিরের ছবি দেখা গিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম। পুরোটাই বাংলা বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে হিসেব করে পা ফেলা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
নিজেকে বাঙালি দল প্রমাণে মরিয়া বিজেপি। তাই প্রশ্ন উঠছে, সেই লক্ষ্যে কি প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে জায়গা পেল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ছবি? যদি সেইসবের ব্যাখ্যা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে মেলেনি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গ বিজেপি নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর ছবিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে পোস্টও করেছে। প্রণববাবুকে নিয়ে বাঙালির আবেগকে কাজে লাগাতেই এহেন পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এই ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘‌এসবে আদৌ কোনও লাভ হবে না। বাংলার ভোট হবে বাঙালি বনাম বহিরাগতদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী যেটা করেছেন সেটা একেবারেই হাস্যকর।’‌