দেশ ব্রেকিং নিউজ

বানভাসী দিঘা–সাগরে মুখ্যমন্ত্রী

ঘূর্ণিঝড়ের আউটার ওয়াল যখন কোস্টে ঢোকা শুরু করেছিল, তখন থেকেই উত্তাল সমুদ্র–সাগর। মৌসম ভবন আপডেট দেয়, ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগে ঢুকতে শুরু করেছে। এটাকেই মূলত ঘূর্ণিঝড়কে স্থলভাগে আছড়ে পড়া বলা হয়। দিঘায় বানভাসী অবস্থা। ভেসে গিয়েছে গ্রাম থেকে বন্দর শহর। ৫১টি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২৮ মে হেলিকপ্টারে করে হিঙ্গলগঞ্জ পরিদর্শন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে যাবেন সাগর ও দিঘায়। দিঘায় রিভিউ বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৯ তারিখ কলকাতায় ফিরবেন তিনি বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, আগামী ২–৩ ঘণ্টা পর্যন্ত ধামরা থেকে বালাসোরের মাঝে ইয়াসের তাণ্ডব চলতে থাকবে। পরবর্তীকালে তা পশ্চিমের দিকে এগোবে। এরপরই ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারাবে। রাতে ওড়িশার দিকে এগোতে এগোতে ঘূর্ণিঝড় এক দফা শক্তি কমাতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় যখন চক্রধরপুর, চাইবাসার কাছে পৌঁছাচ্ছে, তখনও তার শক্তি থাকছে। ফলে বাংলার পশ্চিমের জেলাগুলিতে ঝড়ো হাওয়া বইবে, বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ভরা কোটালে ঘূর্ণিঝড়ের কারণেই অনেক ক্ষতি হয়েছে। একইসঙ্গে জানান রাত ৮.৪৫ পর্যন্ত জোয়ার চলবে তারপর নামবে জলস্তর। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জলস্তর থাকবে পাঁচ ফুটের উপর। আবারও বান এলে গঙ্গা ও সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রচুর মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আজ রাত ৯টায় আবার ভরা কোটাল রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তিন জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে।
১৫ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৩৪টি বাঁধ ভাঙার খবর মিলেছে। ভেঙেছে তিন লাখেরও বেশি বাড়ি। মানুষ–সমান উঁচু ঢেউ উঠেছে। এই দুর্যোগের কবলে ১ কোটি মানুষ। নোনাজল ঢুকে যাওয়ায় চাষের ক্ষতি হয়েছে। মাছ চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ১০ কোটি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাঁধ মেরামতির জন্য টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে রাজ্যে ইয়াসের বলি ১ জন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‌যদিও এটি দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু। উনি কোনও জিনিস আনতে বাইরে বেরিয়েছিলেন।’‌
মৌসম ভবন বলছে, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, কলকাতা, পুর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনায় অতি ভারী বৃষ্টি হবে। সেই সঙ্গে রয়েছে চন্দ্রগ্রহণ। বুধবার দুপুর ৩টো ১৫ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত। ২০২১ সালে এটিই প্রথম ও শেষ ‘ব্লাড মুন’ হতে চলেছে। রাত ৯টায় রয়েছে আবারও ভরা কোটাল। জোড়া ফলায় দুর্যোগ ও দুর্ভোগ বেড়েছে উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের।
মুখ্যমন্ত্রী আজ নবান্নে জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত। পুরো ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করতে ৭২ ঘণ্টা লাগবে। তবে দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমনি অন্যদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, বকখালি প্রভৃতি এলাকায় একের পর এক গ্রামে প্লাবিত। দ্বিতীয়বার কোটালে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, তাতে প্রহর গুনছেন বাসিন্দারা।