করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক গৃহবধূকে। এটাই অপরাধ। তাই বাড়ির বউকে কার্যত ঘরে ঢুকতে দেওয়া হল না। নানান জায়গা ঘুরে দিনের শেষে সহৃদয় মানুষের সাহায্য সেই এক সন্তানের মা জায়গা পেলেন ‘সেফ হোম’–এ। করোনা নিয়ে হাজার প্রচারের পরেও এই প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে গঙ্গা তীরবর্তী হুগলির ডানকুনিতে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই যে, যেদিন ওই গৃহবধূকে কার্যত বাড়িছাড়া করা হল, সেদিনই তাঁর শ্বশুরকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত ওই প্রৌঢ়ের সেবার দায়িত্ব ছিল যে বিতাড়িত গৃহবধূর উপরেই!
গৃহবধূটির অবশ্য গলার স্বরেও সেই নির্বিবাদী মানসিকতার প্রকাশ। উচ্চমাধ্যমিকের পরে স্নাতকস্তরে ভর্তি হলেও পড়া হয়নি। রিষড়া সেবা সদনের সেফ হাউসে বসে তিনি বলেন, ‘এটাই মেয়েদের ভাগ্য। সময় যতই অগ্রসর হোক, আমরা সেই মধ্যযুগেই পড়ে আছি। আমি বাঁচতে চেয়ে ছুটোছুটি করেছি, কারণ আমার একটি শিশুসন্তান আছে। ওর এখনও আমাকে প্রয়োজন।’ যাঁর সাহায্যে ওই গৃহবধূ সেফ হোমে জায়গা পেয়েছেন সেই রিষড়া পুরসভার নোডাল অফিসার অসিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘ওঁনাকে আমি ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখনও নিজের চোখ-কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। এমনটাও হতে পারে! ওই মহিলাকে না দেখলে সেটা বুঝতে পারতাম না। আমারই কান্না পাচ্ছে।’
ডানকুনির বাসিন্দা ২৮ বছরের তরুণী এদিন এলোমেলো ঘুরছিলেন শ্রীরামপুরের ওয়ালস হাসপাতালে। হাসপাতালের কর্মীরা জানতে পারেন, তিনি করোনা আক্রান্ত। কিন্তু রিপোর্ট না থাকায় তাঁকে রিষড়া সেবা সদনে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকেই শ্রীরামপুর পুরসভার নোডাল অফিসার অসিতাভবাবুর ফোন নম্বর পান তিনি। তারপরেই চলে আসেন রিষড়ায়। অসিতাভবাবুকে ওই তরুণী জানান, নিজের চিকিৎসার পথ নিজেকেই দেখতে বলেছে শ্বশুরবাড়ি থেকে।
