বিতর্কিত কৃষি–বিল আবার কংগ্রেস–তৃণমূল কংগ্রেসকে কাছাকাছি নিয়ে এল। রাজ্যে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট থাকলেও এই আন্দোলনে সব বিরোধী দলকেই সঙ্গে নিয়ে বড় আন্দোলনের রূপ দিতে চায় কংগ্রেস। তাই কৃষি সংস্কার সংক্রান্ত নয়া তিনটি আইন রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। নতুন তিনটি আইন যাতে রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর না করে, সেই আর্জি জানিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা।
সূত্রের খবর, এই চিঠিটি তিনি লিখেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর নির্দেশেই। কারণ নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে সংসদের বাদল অধিবেশনে পাশ হয়েছে বিল তিনটি। সেগুলি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সম্মতি পাওয়ার পর আইনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু নয়া আইনে কৃষক স্বার্থে আঘাত পড়তে পারে অভিযোগ তুলে দেশজোড়া প্রতিবাদ চলছে এখনও।
এমনকী বিলগুলিতে রাষ্ট্রপতি সাক্ষর করার পরই মহারাষ্ট্রের জোট সরকারের অন্যতম শরিক কংগ্রেস জানিয়ে দেয়, সে রাজ্যে নতুন তিনটি আইন কার্যকর করা হবে না। আর কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী দেশের কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নির্দেশ দেন, নতুন আইন যাতে ওই রাজ্যগুলিতে কার্যকর না করা হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে। সংবিধানের ২৫৪(২) ধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রের আইন রাজ্যে বলবৎ না করার বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া যায়। রাজ্যগুলি পাল্টা আইন পাশ করিয়ে নিতে পারে বিধানসভায়।
উল্লেখ্য, সংসদের বাদল অধিবেশনে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সংশোধনী’, ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ এবং ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ সংক্রান্ত তিনটি বিল পেশ করেছিল কেন্দ্র। সংসদের বাইরে-ভিতরে বিক্ষোভের মাঝেই সেই বিলগুলি পাশ হয়ে যায়।
সংসদে কৃষি বিলগুলি রুখতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল তৃণমূল। রাজ্যসভায় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে তৃণমূল সাংসদদের সাসপেন্ড পর্যন্ত হতে হয়। কৃষি বিলের প্রতিবাদে শিরোমণি অকালি দল বিজেপি–সঙ্গ ত্যাগ করলে তাদের সমর্থন জানায় পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল। শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে যোগ দিয়ে নয়া কৃষি আইনের তীব্র সমালোচনা করে মমতা বলেন, ‘এই কৃষি আইনের জেরে শেষ হয়ে যাবে কৃষকদের জীবন। কৃষকরা যে ফসল উৎপাদন করবেন, তা তাঁরা নিজেরাই খেতে পারবেন না। বিষয়টি কৃষকদের ভালো করে বোঝাতে হবে।’ তারপরই সোনিয়ার নির্দেশে মমতাকে চিঠি লেখেন প্রদীপবাবু। সুতরাং এই কৃষি–বিল নিয়ে বড় আন্দোলনের মুখে পড়তে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার তা বলাই যায়।