মুখ্যমন্ত্রীর লেখা একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে ফের রাজভবন–নবান্ন সংঘাত বাধল। কয়েকদিন আগে রাজ্য পুলিশের পদাধিকারীকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার। এই নিয়ে রাজ্যপালের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে কড়া চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আপনি কেন্দ্রের শাসকদলের এজেন্টের মতো কাজ করছেন। যেহেতু আপনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, তাই দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাংবিধানিক পদে থেকে কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না। কিন্তু খুবই হতাশাজনক যে, আপনি কেন্দ্রের শাসকদলের এজেন্টের মতো কাজ করছেন।’
চিঠিতে উষ্মাপ্রকাশ করে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, সরকার জনগণের নির্বাচিত। তিনিও নির্বাচিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন। রাজ্যপাল সম্পূর্ণ মনোনীত পদ। তাই আইন মেনে সাংবিধানিক কাজ করা উচিত। প্রশাসনিক কাজে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। দিনকয়েক আগে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল বীরেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ধনকার। কিন্তু রাজ্যপাল তলব করলেও ডিজি তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। বিতর্কের সূত্রপাত সেখানেই।
রাজ্যপালকে দেওয়া চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে যে ফৌজদারি তদন্ত চলছে, সে ব্যাপারে আপনি ডিজি’র কাছে জানতে চেয়েছেন। এটা শুধু সরকারের দিনগত কাজে নাক গলানো নয়, বরং তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা বলেও মনে করা যেতে পারে। এরই পাল্টা রাজ্যপালের বিস্ফোরক বক্তব্য, রাজভবনের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। রাজভবনের গোপন তথ্য কী করে রাজ্য প্রশাসনের সবোর্চ্চ স্তরে গেল? নবান্নের কোনও গোপন তথ্য এভাবে এলে, আমি সতর্ক করতাম।
বাণিজ্য সম্মেলনে কত টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, কী কী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার বিশদও তিনি জানতে চেয়ে সরাসরি অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে চিঠি দিয়েছেন। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে রাজ্যের পুরমন্ত্রী, কলকাতা পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানান, রাজ্যপাল যে কত অপদার্থ, তা প্রমাণ হয়ে গেল। ওনার কাজ মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়া। তা না করে নিজের রাজ্যের সমালোচনা করছেন। উনি আসলে একটি রাজনৈতিক দলের অনুগত।
রাজ্যপাল অতীতের মতো এবারও মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পেয়ে ট্যুইট করে গিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ডিজিকে আমি ডেকেছিলাম। কিন্তু আসেননি। পরিবর্তে দু’লাইনের চিঠি লিখে বলেছেন, রাজ্য পুলিশ কঠোরভাবে আইনি পথ মেনে চলে। পাল্টা রাজ্যপাল টুইটে লেখেন, বাংলা এখন সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। মুখ্যমন্ত্রীকে রবিবার তিনি জবাব দেবেন বলেও জানিয়েছেন রাজ্যপাল।