দেশ লিড নিউজ

মুখ্যমন্ত্রী অনুমতি নেননি প্রধানমন্ত্রীর

কলাইকুন্ডার পর্যালোচনা বৈঠক। কেন্দ্র–রাজ্যের মধ্যকার সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। গত শুক্রবারের সেই বৈঠক নিয়ে এখনও চলছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের টানাপোড়েন। কেন্দ্রের দাবি, ওই বৈঠক প্রসঙ্গে মিথ্যা দাবি করেছেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠক বয়কট করেছেন।
রাজ্যের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সোমবার দিল্লিতে যে চিঠি লিখেছিলেন, তাতে তিনি স্পষ্ট করে জানান, তিনি কলাইকুন্ডার বৈঠক থেকে মুখ্যসচিবকে নিয়ে দিঘায় বিপর্যয় খতিয়ে দেখতে রওনা হওয়ার আগে ‘নির্দিষ্ট ও স্পষ্টভাবে’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র এদিন একাধিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে সেদিনের বৈঠক ছাড়ার কোনও অনুমতি দেননি। কিন্তু সেটা এতদিন পরে কেন জানালেন তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক সূত্র মমতার সেই চিঠির পালটা ৯টি বিষয় উত্থাপন করেছে। চিঠিতে মমতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি ঠিক হওয়ার আগে থেকেই তাঁর দিঘা সফরের পরিকল্পনা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য তাতে রদবদলও করেন তিনি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলেই কলাইকুন্ডা যাওয়ার আগে হিঙ্গলগঞ্জ ও সাগরে যান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চপারের জন্যই সাগরে তাঁর চপার আটকে দেওয়া হয়। তিনি ২০ মিনিট সেখানে অপেক্ষা করেন। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী কলাইকুন্ডা পৌঁছেছিলেন।
কেন্দ্রের ওই সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর আগেই কলাইকুন্ডা পৌঁছনো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেখানে ১টা ৫৯ মিনিটে কলাইকুন্ডা পৌঁছে যান, সেখানে মমতা পৌঁছন ২টো ১০ মিনিটে। যা ‘প্রোটোকল’ বিরোধী। রাজ্যের যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রী আটকে গেলেও রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এবং জেলাশাসক সেখানে ছিলেন। সুতরাং, এতে প্রোটোকল ভঙ্গ হয়নি। মমতার যুক্তি ছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বার্তা পাঠালে ইতিবাচক ইঙ্গিতও মেলে। কিন্তু শেষমুহূর্তে বৈঠকের কাঠামো বদলে দেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের যুক্তি, ওই বিধায়ক আর কেউ নন, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আগেও একাধিক রাজ্যে বিরোধী দলনেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রিভিউ মিটিং করার উদাহরণ আছে। তৃণমূল পালটা প্রশ্ন তুলছে, তাউকতের পর গুজরাটের পরিস্থিতি নিয়ে রিভিউ মিটিংয়ে কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতাকে ডাকা হয়নি।
সব মিলিয়ে কলাইকুণ্ডার সেই বৈঠককে ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্যের যে সংঘাত শুরু হয়েছে, তা দীর্ঘায়িত হবে বলেই মত প্রশাসনিক মহলের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সরকারিভাবে চিঠি লিখেছেন, সেই চিঠির জবাব সরকারিভাবে দেওয়ার আগেই সূত্র মারফৎ তা ফাঁস করে দেওয়া কতটা শোভন? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।