বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার গড়ার ছক বিজেপি বারবার করে দেখিয়েছে। এবার নিজেরাই বেজায় বিপাকে পড়ে গেল। এমনকী সরকার টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংকট দেখা দিল। কারণ তিনজন বিজেপি বিধায়ক পদত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দিলেন। আর ৬ জন নির্দল বিধায়ক যাঁরা মণিপুর বিজেপি সরকারকে সমর্থন করেছিলেন তাঁরা সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেন। ফলে সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এন বীরেন সিং মন্ত্রিসভার। এখন ৬০ সদস্যের মণিপুর বিধানসভায় বিজেপি’র বিধায়ক সংখ্যা ২১ থেকে কমে ১৮ হল।
সূত্রের খবর, বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য একক বৃহত্তম দল কংগ্রেস রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এন বীরেন সিং সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চায় কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী— ও ইবোবি সিং পরবর্তী সরকার গড়তে চেয়ে তাঁর দাবি জানিয়েছেন। বিদ্রোহী তিন বিজেপি বিধায়ক হলেন হেংলেপ থেকে নির্বাচিত টিটি হাওকিপ, নাওরিয়া পাখাংলাপা থেকে নির্বাচিত সোইবাম সুভাষচন্দ্র এবং তামেংলং থেকে নির্বাচিত স্যামুয়েল জেন্দাই।
এখন সরকার গড়ার ব্যাপারে কংগ্রেসের মনোবল বৃদ্ধির আরও কারণ হল, শুধু তিন জন বিজেপি বিধায়কই নন, বিজেপি সরকারের শরিক দল মণিপুর পিপলস পার্টির চার জন বিধায়কও কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জিরিবাম থেকে নির্বাচিত নির্দল সদস্য আসাফুদ্দিন এবং রাজ্যের একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক টোংব্রাম রবীন্দ্র সিং-ও কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন, উপমুখ্যমন্ত্রী ওয়াই জয়কুমার সিং, এন কায়াসি, জয়ন্ত কুমার সিং এবং লেটপাও হাওকিপ।
উপ–মুখ্যমন্ত্রী ইউমনাম জয়কুমার সিং মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর ইস্তফাপত্রে লিখেছেন, ‘আপনাকে জানাচ্ছি, আপনার নেতৃত্বাধীন বিজেপি’র জোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যপদ থেকে আমি পদত্যাগ করলাম।’ জানা গিয়েছে, এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে জয়কুমার সিংয়ের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। গত এপ্রিল মাসে জয়কুমারের সমস্ত দায়িত্ব কেড়ে নেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের নির্বাচনের পর ২৮টি আসন দখল করে কংগ্রেস একক বৃহত্তম দল হলেও, তাদের ৮ জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেন। জুন মাসের গোড়ায় মণিপুর হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক স্পিকার এঁদের মধ্যে সাতজনকে বিধানসভায় ঢুকতে দেননি। গত মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দেশ অনুসারে অষ্টম জন শ্যামকুমারের বিধায়কপদ বাতিল হয়ে যায়। নাগা পিপলস ফ্রন্টের চার ও লোক জনশক্তি পার্টির একমাত্র বিধায়ক এখনও বিজেপি’র সঙ্গে রয়েছে। ফলে বিজেপি’র দিকে বিধায়ক সংখ্যা এখন ২৩।
অঙ্ক কষলে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের শ্যামকুমারের বিধায়কপদ বাতিল হয়ে যাওয়ায় মণিপুর বিধানসভায় এখন কার্যত সদস্য সংখ্যা ৫৯। যদি ঢুকতে না পাওয়া বাকি ৭ বিধায়ককেও গণনার বাইরে রাখা হয়, তাহলে বিধানসভার কার্যকর সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ৫২। সরকার গড়তে গেলে অন্তত ২৭ জনের সমর্থন দরকার। কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা এখন ২০। সদ্য দলে যোগ দেওয়া ৩ বিজেপি বিধায়ক, ৪ এমপিপি বিধায়ক, ১ তৃণমূল বিধায়ক এবং একমাত্র নির্দল বিধায়কের সমর্থন ধরলে কংগ্রেস শিবিরে রয়েছেন ২৯ বিধায়ক।
