জানুয়ারি মাসেমেঘ ভাঙা বৃষ্টি! তার সঙ্গে হিমবাহ ভেঙে ‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড’। এমনটা শোনা যায় না সচরাচর। ঠান্ডায় তো জমে থাকার কথা হিমবাহের। এমন সময়ে ভেঙে পড়ল কেন? কলকাতাতেও কি মেঘভাঙা বৃষ্টি হতে পারে? কী বলছেন পরিবেশবিদরা?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক লক্ষ্মী শিবরামকৃষ্ণন জানান, নদীর স্বাভাবিক গতিপথ আটকে বাঁধ দেওয়াতেই গণ্ডগোল। উত্তরাখণ্ড জুড়ে গড়ে উঠেছে একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। পিপল কোটি হাইড্রো প্রোজেক্ট, বিষ্ণুপ্রয়াগ প্রোজেক্ট, ঋষি গঙ্গা পাওয়ার প্রোজেক্ট। উত্তরাখণ্ডের গড় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে এই প্রকল্পগুলি। যার জেরে উষ্ণ হচ্ছে উত্তরাখণ্ডের শীতকাল। আগে উত্তরাখণ্ডে শীতের তাপমাত্রা থাকত মাইনাস ৬ থেকে মাইনাস ১০ ডিগ্রির কাছাকাছি। এখন তা হিমাঙ্কের দু’ডিগ্রি নিচে নামে। যার জন্য গলতে শুরু করেছে হিমবাহ। আর ধরে রাখতে পারছে না ভারী বরফের চাঁই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের এই প্রভাব কলকাতাতেও পড়তে পারে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশেনোগ্রাফির অধ্যাপক সুগত হাজরা জানান, মেঘভাঙা বৃষ্টি এখন আর স্রেফ শোনা কথা নয়। কেউ ভাবতে পেরেছিল? শীতকালে নন্দাদেবী হিমবাহের একটা অংশ ভেঙে পরবে ধৌলি গঙ্গায়। মেঘভাঙা এই বৃষ্টি তিলোত্তমার মানুষও চাক্ষুষ করতে পারে। ডা. হাজরার কথায়, সমতল হওয়ায় এখানে প্রাণহানি হবে না। তবে জলের তলায় চলে যাবে শহরের নিচু এলাকা।
পরিসংখ্যান বলছে ক্রমশ বৃষ্টি বাড়ছে এই শহরে। সুগত হাজরা জানান, গভীর পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত গত ৭০ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা ও মধ্য ভারতে অতিপ্রবল বৃষ্টি প্রায় তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। ভারী বৃষ্টিও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। তবে বঙ্গোপসাগরের তুলনায় আরব সাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধি বেশি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে এবং সেটাই বর্ষাকালে পশ্চিম ও মধ্য ভারতে অতিবৃষ্টি বাড়াচ্ছে। গতবছরই আমফান ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল কলকাতা। সমীক্ষা বলছে, প্রতি ১০ বছরে ৮ শতাংশ করে শক্তি বাড়াচ্ছে এহেন ঘূর্ণিঝড়। অধ্যাপকের কথায়, এখনই সচেতন হয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন না ঠেকাতে পারলে বন্যা দেখতে পাবে কলকাতা। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রেহাই পাবে না কলকাতারও।
