পূর্ব লাদাখে অতন্দ্র প্রহরায় দুদেশের সেনা। পরস্পরের উপর নজর রেখে চলেছে তারা, যে যার অবস্থানে অনড়। ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনের ডেরার উপস্থিতি ভারত সরকারিভাবে স্বীকার বা অস্বীকার কোনওটাই করেনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীও মুখে কুলুপ। তার মধ্যেই সামনে এলো ২৬ জুনের উপগ্রহ চিত্র। যাতে ১৬টি চিনের শিবিরের উপস্থিতি স্পষ্ট।
যে উপগ্রহ চিত্র হাতে এসেছে তা দেখলে চিনের আগ্রাসন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ৩৩ দিনে সুপরিকল্পনায় নিজেদের পাল্লা ভারী করেছে চিন। গলওয়ানের ওয়াই নালার কাছে চিন সেনাছাউনি গড়ে প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৪–তে ভারতীয় সেনার টহলদারিতে বাধার সৃষ্টি করছে বলে খবর আগেই মিলেছিল। এবার জানা গেল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ৩৩ দিন ধরে নিজেদের জমি পাকাপোক্ত করেছে চিন।
প্রকাশ্যে এসেছে কিছু উপগ্রহ চিত্র। চিনের আগ্রাসনই তার হাতে গরম প্রমাণ। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৯ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে রয়েছে শিবিরগুলি৷ তার মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার এপারে, ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে কালো ত্রিপলে ঢাকা ১০টি সেনাছাউনি দেখা গিয়েছে৷ সূত্রের খবর, ওই কালো ছাউনিগুলিই ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা চিনের সেনার ডেরা। ২২ মে উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, গলওয়ানের কাছাকাছি একটি ইগলুর মতো ক্যাম্প ও ২০ জন সৈনিক। তারপরেই ১৫ জুন, সংঘর্ষ।
গলওয়ান এবং শায়ক নদীর মোহনার বাঁকে গড়ে ওঠা এই চিনের ঘাঁটি থেকে ভারতের প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৪–এর দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। ফলে এখানে বসে ভারতীয় সেনার গতিবিধির উপর নজর রাখা সহজ। আবার উত্তর লাদাখে ভারত যে দুরবুক–দৌলত বেগ ওল্ডি হাইওয়ে বানাচ্ছে, তার দূরত্ব এই কালো ছাউনি থেকে মেরেকেটে ৬ কিলোমিটার। ভারতের এই রাস্তা তৈরি নিয়েই চিনের আপত্তি। পরবর্তী উপগ্রহ চিত্র ২২ জুনে ধরা পড়েছে গোলাপি ত্রিপলে আচ্ছাদিত একটা অঞ্চল ও গলওয়ান থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দূরেই দাঁড়িয়ে ৫০ জন সৈনিক। অর্থাৎ ১৬ থেকে ২২ জুন এই ৬ দিনের মধ্যেই পাকাপাকি ঘাঁটি তৈরি করেছে লাল ফৌজ।
ভারত যে দুরবুক–দৌলত বেগ ওল্ডি হাইওয়ে বানাচ্ছে তা তৈরি হয়ে গেলে সারা বছর, বিনা বাধায় কারাকোরাম পাসে পৌঁছতে পারবে ভারতীয় সেনা, আর সেখানে বসে আকসাই চিনে চিনের সেনার গতিবিধির উপর নজরদারি সহজ। তাছাড়া এই রাস্তা দিয়েই দৌলত বেগ ওল্ডির বায়ুসেনা এয়ারস্ট্রিপে সহজে পৌঁছনো সম্ভব। আর এই বিমানঘাঁটিতেই ভারতীয় সেনার রসদ ও অস্ত্রের জোগান আসে। এই নতুন রাস্তাটা না থাকলে, শীতকালে দৌলত বেগ ওল্ডি এবং তার উত্তরের অংশ প্রবল বরফে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই রাস্তা ভারতকে কৌশলগত সুবিধা দেবে, আর সেটাতেই চিনের আপত্তি।
উপগ্রহ চিত্রে যে ছবি ফুটে উঠছে তা থেকে বলা যায় ভারতের দৌলতবেগ ওলদি বায়ুসেনা ঘাঁটির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে চিনের সেনা। যদি চিন অবস্থান না বদলায় তাহলে কঠোর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, লাদাখের বিস্তীর্ণ অংশে তৈরি রাখা হয়েছে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র (স্যাম) উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা৷ আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, লাদাখে প্রতিবেশীকে অত্যন্ত কড়াভাবেই মোকাবিলা করেছে ভারত। ওখানে যারা আমাদের চ্যালেঞ্জ করেছিল তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে। ভারত জানে কীভাবে কারও ভালো বন্ধু হতে হয়। কিন্তু কেউ আমাদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করলে তখন তার জবাব কীভাবে দিতে হয় তাও ভারত জানে।