রাজ্য কমিটি তৈরি করার মধ্যে দিয়েই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার তিনি এতদিন যা বলে আসতেন এবার সেই পথে নিজেই হাঁটলেন। তিনি বারবার বলতেন তৃণমূল থেকে ছেঁটে ফেলা লোকজনকে বিজেপি কুড়িয়ে নেয়। এবার জেল খাটা আসামী মাওবাদী ছত্রধর মাহাতকে রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেলেন। আর সিপিএমের বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাকাপাকি জায়গা দিয়ে আলিপুরদুয়ারের দায়িত্ব দিয়েছেন নেত্রী।
কেন এদের দু’জনকে জায়গা দেওয়া হল? জানা গিয়েছে, দীর্ঘ কারাবাস কাটিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে যখন নিজের এলাকায় ফিরেছিলেন তিনি, তখনই বোঝা গিয়েছিল, তিনি এখনও তুরুপের তাস। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এখনও লেগে রয়েছে তাঁর মুখে কথায়। তখন থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, জঙ্গলমহলে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাওয়া তৃণমূলের ঘোড়া হয়ে উঠতে পারেন সেই ছত্রধর মাহাত। বাস্তবে হলও তাই। মাওবাদী সন্দেহে দীর্ঘদিন জেলে কাটানো ছত্রধর বৃহস্পতিবার থেকে হলেন তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য। গেরুয়া শিবিরকে টাইট দিতেই তাকে লেলিয়ে দেওয়া হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছিল জঙ্গলমহলের একাংশ মানুষ। মূলত ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়া দুটি লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। কেন হাতছাড়া হয়েছে তা নিয়ে গত একবছরে অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণ হলেও তৃণমূল সুপ্রিমো মনে করেন জঙ্গলমহলের ক্ষত এখনও সারেনি। তাই সেই ক্ষততে প্রলেপ দিয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় সংগঠনে রদবদল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতে যথেষ্ট গুরুত্ব পেল জঙ্গলমহল।
এছাড়া ছত্রধর মাহাতোকে রাজ্য কমিটিকে এনে দলছুট কুর্মি সম্প্রদায়কে আবার নিজের দিকে টানার চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রামে প্রায় ৩৪ শতাংশ কুর্মি সম্প্রদায়ের মানুষ। পরিসংখ্যান বলছে এরা লোকসভা ভোটে তৃণমূলের থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছিল। আর ঋতব্রতকে জায়গা দিয়ে সিপিএমকে চমকে দিতে চাইলেন তৃণমূলনেত্রী। এই ঋতব্রত দিল্লিতে অমিত মিত্রকে চরম হেনস্থা করেছিলেন। তখন তিনি সিপিএমে। আর বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি তৃণমূলের আদিবাসী কমিটির দায়িত্বে আসেন। এখন তিনি রাজ্যসভার সদস্য নন। কারণ মেয়াদ ফুরিয়েছে। তাই তাঁকে আলিপুরদু্য়ারের দায়িত্ব দিয়ে সংগঠন মজবুত করতে চান নেত্রী। ঋতব্রত সংগঠন তৈরি করতে যথেষ্ট দক্ষ এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।