দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের দাপট দেখা দিয়েছে। বাংলাতেও সেই রক্তচক্ষু দেখা যাচ্ছে। তাই এই পরিস্থিতিতে গ্রামীণ মানুষের রোজগার নিশ্চিত করতে ১০০ দিনের কাজই সরকারের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে ওঠে। এমনকী গত কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্পে এক নম্বরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অন্য সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে গত আর্থিক বছরে ৪১ কোটি ২৫ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে বাংলা। কিন্তু এই পারফরম্যান্স থাকা সত্ত্বেও ২০২১–’২২ আর্থিক বছরে রাজ্যের জন্য মাত্র ২২ কোটি শ্রমদিবস বরাদ্দ করেছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যেই শুরু হয়েছে নতুন অর্থবর্ষ। তা সত্ত্বেও বসে থাকেনি পঞ্চায়েত দফতর। ১০০ দিনের কাজ পুরোদমে চলেছে। অথচ এখনও এই খাতে রাজ্যের ঘরে এক টাকাও পাঠায়নি কেন্দ্র বলে অভিযোগ।
কিন্তু এসবের মধ্যেও থামতে রাজি নন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শপথ নিয়েই কাজে নেমে পড়েছেন জোরকদমে। আগামী মঙ্গলবার দফতরের সব পাইলট প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা অফিসারদের বৈঠকে ডেকেছেন তিনি। এই বিষয়ে সুব্রতবাবু বলেন, ‘গত বছর আমরা সর্বকালীন রেকর্ড করেছি। গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম চাবিকাঠি হল এই ১০০ দিনের কাজ। এটা একটা অধিকার। আমাদের শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা যা দেওয়া হয়েছিল তা কয়েক মাসের মধ্যে ছাপিয়ে যায়। গত দু’মাস ভোট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এবার অফিসারদের থেকে রিপোর্ট নিয়ে টাকা দেওয়া–সহ সব বিষয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে দরবার করা হবে।’ কাজ জোরকদমে করার জন্য পঞ্চায়েতগুলিতে নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী।
২০২০ সালের ২৪ মার্চ লকডাউন ঘোষণার একমাস পরেই ১০০ দিনের কাজকে ছাড় দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে অনেক পরিযায়ী শ্রমিককে ১০০ দিনের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাই শ্রমদিবস তৈরিতে অনেকটা এগিয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ। গত আর্থিক বছরে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ২৯ হাজার মানুষ ১০০ দিনের কাজে যুক্ত ছিলেন। ১২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৪৩৯ ধরনের কাজ হয় এই প্রকল্পের মাধ্যমে। লকডাউনের মধ্যে কাজের গতি নিয়ে সংশয়ে ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। যার জন্য অডিট করেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল কাজ দেখতে রাজ্যেও চলে আসে। অবশেষে অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রার অনুমোদন মেলে। সেই মতো টাকাও দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। গত অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে মোট ১১ হাজার ১০১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছে রাজ্য। যার মধ্যে মজুরি বাবদ ৯ হাজার ৪৫৬ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা এবং ১ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা সরঞ্জাম কেনার জন্য দেওয়া হয়েছে। ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৪৫৮ কোটি ২১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেক করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই খাতে রাজ্যের কোষাগারে কোনও টাকা আসেনি। এই ইস্যুতে কোনও সাড়াশব্দ না করে যেভাবে ভোটের হিংসা দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল বাংলায় আসছে, তাতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ নবান্ন। তবে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠানো হবে বলে সূত্রের খবর।