খাস নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে বিজেপিতে অন্তর্দ্বন্দ্বের ছায়া আরও স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর পর এবার গোটা মন্ত্রিসভাই বদলে দেওয়া হল গুজরাতে। সেটাও মাত্র ছ’দিনের মধ্যে। মোট ২৪ জন মন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন। মহিলা মাত্র দু’জন। বিজয় রুপানির সতীর্থদের কেউ সেখানে জায়গা পাননি। ক’দিন আগে বুক ঠুকে ‘কেউ আমাকে সরাতে পারবে না’ বলা উপমুখ্যমন্ত্রী নীতীন প্যাটেলকে পর্যন্ত নয়। বদল করা হয়েছে বিধানসভার অধ্যক্ষকে। সেটাও নাটকীয়ভাবে। অধ্যক্ষ পদ আচমকা ইস্তফা দেন রাজেন্দ্র ত্রিবেদী। খানিক বাদেই তিনি শপথ নেন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে। গোটা মন্ত্রিসভায় কার্যত তিনিই একমাত্র রুপানি জমানার প্রতিনিধি। বিধানসভার অধ্যক্ষ পদে নিয়ে আসা হয়েছে ভুজের বিধায়ক নিমাবেন আচার্যকে।
গত ছ’মাসের মধ্যে উত্তরাখণ্ডে দু’বার, কর্ণাটকে একবার মেয়াদ শেষের আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল হয়েছে। কিন্তু গোটা মন্ত্রিসভা বদলের রাস্তায় হাঁটেনি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল। কারণ, সেক্ষেত্রে বিদ্রোহ ছিল কেবল মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। গুজরাতে দলের অন্দরে ক্ষোভ আরও বড় আকার নিয়েছে। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র দেড় বছর আগেই আমূল পরিবর্তন করা হল সে রাজ্যের বিজেপি সরকারে। নতুন মুখদের সামনে রেখেই মোদী-শাহের রাজ্যে ভোটের ময়দানে ঝাঁপাবে গেরুয়া শিবির। শপথ নেওয়া ‘কারিয়াকর্তা’দের ট্যুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল প্রথমবারের বিধায়ক। তাঁর মন্ত্রিসভায় রয়েছেন ১০ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ন’জন প্রতিমন্ত্রী এবং পাঁচজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। ২১ জন এই প্রথম মন্ত্রী হলেন। পুরনোদের মধ্যে রয়েছেন রাজেন্দ্র ত্রিবেদী এবং গুজরাত বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি জিতু ভাগনানি। নরেশভাই প্যাটেল, হর্ষ সাংভি, মণীশ উকিল, কিরীটসিং রানা–সহ প্রায় সকলেই কার্যত যুবনেতা হিসেবে পরিচিত। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা ঠোকা সুরাতের পূর্ণেশ মোদীকেও মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হয়েছে। ভূপেন্দ্র ছাড়াও এদিন শপথ নেওয়া হৃষিকেশ প্যাটেল এবং জগদীশ প্যাটেল গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেলের একান্ত অনুগত বলে পরিচিত।
গত ১১ সেপ্টেম্বর রুপানির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকেই গুজরাতে বিজেপির অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে। অনেকেই বলছেন, নির্বাচনে জিততে প্রবীণ নেতৃত্বের হাত থেকে ক্ষমতা সরানোর উপরেই জোর দিচ্ছে বিজেপি। তারই ফলস্বরূপ এই রদবদল। যদিও রাজনৈতিক মহলের মত, নতুনদের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখা অপেক্ষাকৃত সহজ। পুরনো নেতৃত্বের উপর মোদি-অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ আলগা হচ্ছে বুঝেই এমন সিদ্ধান্ত। একের পর এক বিজেপি শাসিত রাজ্যেই এমন চাপানউতোর চিন্তায় রাখছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে।