কণ্ঠস্বরে সেই চেনা দৃঢ়তা রয়েছে৷ অসুস্থতার কারণেই অনেকটাই ক্ষীণ হয়েছে স্বর৷ নির্বাচনের আগে লিখিত বিবৃতিতে বলেছিলেন, কমরেডরা যখন বাইরে লড়াই করছেন, তখন গৃহবন্দি হয়ে থাকাটা তাঁর কাছে মানসিক যন্ত্রণার৷ নিজের সাধ্যমতো তাই ঘরে থেকেই নিজের দল সিপিআইএম এবং বামফ্রন্টের হয়ে মানুষের কাছে নিজের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন সোমবার৷ এবার লিখিত বার্তার পাশাপাশি দীর্ঘদিন পর অডিও বার্তাও দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷
বঙ্গ–সিপিআইএমকে এখনও নির্ভর করতে হচ্ছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ৭৭ বছরের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপরই। একটি অডিও বার্তায় তিনি উৎসাহিত করেছেন তাঁর অনুগামী সমর্থকদের। তিন মিনিট একচল্লিশ সেকেন্ডের ওই অডিও বার্তায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় শাসকদলেরই কড়া সমালোচনা করেছেন এবং বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ জোটের হয়ে সওয়াল করেছেন।
সোমবারের বিবৃতিতেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, নন্দীগ্রাম–সিঙ্গুরে শিল্প আনতে বাধা দিয়ে যাঁরা চক্রান্ত করেছিলেন, তাঁরাই এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন৷ এদিনের অডিও বার্তাতেও রাজ্যের শাসক দলকেই চূড়ান্ত আক্রমণ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷ নন্দীগ্রাম–সিঙ্গুরে এখন শ্মশানের নীরবতা বলে আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে৷ একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, রাজ্যে গণতন্ত্র বিপদের মুখে৷
বাম সমর্থক, অনুগামী ও নাগরিকবৃন্দের প্রতি তাঁর অডিও বার্তার একেবারে প্রথমেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘আমরা সকলেই বুঝতে পারছি, এই রাজ্যের রাজনীতিতে এ এক সন্ধিক্ষণ। বামফ্রন্টের আমলে আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম—কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। সেই চিন্তাধারা নিয়েই আমরা এগিয়েছি। কৃষিতে যেমন সাফল্য এসেছিল, তেমন শিল্পের প্রসার ঘটতেও শুরু করেছিল। বামফ্রন্ট অপসারিত হওয়ার পরে তৃণমূলের সরকার রাজ্যজুড়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।’
তৃণমূল–বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘একদিকে তৃণমূলের স্বৈরতান্ত্রিক নৈরাজ্য, অন্যদিকে বিজেপির আগ্রাসন, রাজ্যে বিপদের পরিবেশ তৈরি করেছে৷ রাজ্যে বিপদের মুখে থাকা গণতন্ত্রকে বাঁচাতে এছাড়া উপায় নেই৷ আমার আবেদন সকলের কাছে, পশ্চিমবঙ্গকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার তৈরি করে নতুন ইতিহাস তৈরি করুন৷’
