জেলা

দুই বাংলার ভাই–বোনের মিলন

দাদার কণ্ঠস্বর শুনে নিশ্চুপ বোন। শুধু ফোনের ওপারে কান্নার আওয়াজ! কাঁদবেন না কেন, ৫০ বছর পর দাদার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হচ্ছে যে তাঁর! দাদা থাকেন বাংলাদেশের বাড়িতে। বোন বাংলার খড়্গপুরে। হ্যাম রেডিও’র সৌজন্যে অর্ধশতাব্দী পর হারানো সম্পর্ক ফিরে পেলেন দুই বাংলার ভাই–বোন। তাঁদের মেলাতে পেরে উচ্ছ্বাসিত দুই বাংলার হ্যাম রেডিও’র সদস্যরাও। দাদার নাম পুতুল দে। বয়স ৬৫। সম্পর্কে জ্যাঠতুতো দাদা। বোন বাবলি দে। তিনিও ৫৫ ছুঁইছুঁই।

১৯৫১ সালে বাবলিদেবীর বাবা-মা বাংলাদেশ থেকে খড়্গপুরে আসেন। বাবা রেলে চাকরি পান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবলিদেবী খুবই ছোট ছিলেন। তাঁর দুই জ্যাঠতুতো দাদা রবীন দে ও চন্দ্রশেখর দে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা বাংলাদেশ থেকে খড়্গপুরে এসে আত্মগোপন করেছিলেন। রবীনবাবু মারা গেলেও চন্দ্রশেখরবাবু এখনও জীবিত। পুতুলবাবু চন্দ্রশেখরবাবুর ভাই। পুতুলবাবুর সঙ্গে বাবলিদেবীর কোনওদিন দেখা হয়নি। কথাও হয়নি।

১৯৭৮ সালে মা এবং ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর আরও একা হয়ে যান বাবলিদেবী। বিয়ে করেননি, একাই থাকেন। বাবার মুখে বাংলাদেশের গল্প শুনলেও তাঁর যাওয়া হয়নি। তাঁর জন্ম খড়্গপুরেই। তবে বাবলিদেবীর ইচ্ছে ছিল, চট্টগ্রামের ২০৩ জুবিলি রোডের বাড়িতে যাবেন জ্যাঠতুতো দাদাদের সঙ্গে দেখা করতে। ২০০৩ সালে চিঠিও দিয়েছিলেন। ঠিকানা বদল হওয়ায় উত্তর আসেনি। হ্যাম রেডিও’র সৌজন্যে পুতুলবাবুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। আবেগে ভেসে যান দুই ভাই-বোনই। বাবলিদেবী বলেন, ‘‌পাসপোর্ট হয়ে রয়েছে। ভিসা এখনও পাইনি। ভিসা পেলেই দাদাদের কাছে যাব। হ্যাম রেডিও’র জন্যই দাদাদের খোঁজ পেলাম।’‌

হ্যাম রেডিও’র ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‌খড়্গপুর আইআইটি’র মাধ্যমে বাবলি দে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তারপর হ্যাম রেডিও’র অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি অব বাংলাদেশের সদস্য শামসুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁর দাদার খোঁজ পাই। ভাই-বোনের এই মিলনে আমরাও খুশি।’‌