১৯০৮ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি কলকাতার রায় পরিবারের গড়পাড় রোডের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন লীলা মজুমদার। তিনি ছিলেন সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন এবং সত্যজিৎ রায়ের পিসি। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন তাঁর কাকা। সাহিত্যের এই প্রবাদপ্রতিম নামগুলি কখনোই ছুঁতে পারেনি লীলা মজুমদারকে।
শিশুসাহিত্যিক হিসেবেই তার ব্যাপক পরিচিতি। বাল্যজীবন কেটেছে শিলঙে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি পরীক্ষায় তিনি ইংরেজিতে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেন। ১৯৩৩ সালে পিতার অমতে গিয়ে স্বনির্বাচিত পাত্রকে বিবাহ করার স্পর্ধা তিনি দেখিয়েছিলেন। বিয়ে করেন দন্তচিকিৎসক ডাঃ সুধীর কুমার মজুমদারকে।
পিতৃ পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট থাকলেও পিতার সঙ্গে সম্পর্ক চিরকালের মতো ছিন্ন হয় তারপর থেকেই। বিবাহিত জীবনে লীলা-সুধীর খুব সুখী দম্পতি ছিলেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন ভারত সরকারের শিশু সাহিত্য পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার-সহ আরো অগুনতি পুরস্কার।
বিশ্বভারতীতে ইংরেজি শিক্ষিকা হিসাবে কর্মজীবনের শুরু। তার পর আশুতোষ কলেজে মহিলা বিভাগে। অনেকটা সময় আকাশবাণীতে প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রথম গল্প লক্ষ্মীছাড়া ১৯২২ সালে সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় সন্দেশ পত্রিকা পুনরায় শুরু করলে তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৪ অবধি সাম্মানিক সহ-সম্পাদক হিসাবে পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, ১৯৯৪-এ তার স্বাস্থের অবনতির জন্য অবসর নেন।
আট দশকরে সাহিত্যজীবনে তিনি দিয়েছেন কিছু অমূল্য উপহার- হলদে পাখির পালক,টং লিং,পদিপিসীর বর্মী বাক্স, সব ভুতুড়ে ইত্যাদি। তাঁর সৃষ্টিকে শ্রদ্ধা জানাতে আপামর বাঙালি যখন তাঁর শতবর্ষ পালনে ব্যস্ত, সেই সময়ই ২০০৭ সালে চিরবিদায় নেন তিনি।