বিজেপি’র নবান্ন অভিযান হল না। গেরুয়া শিবির এই কর্মসূচিকে নবান্ন অভিযান বলে যতই চালানোর চেষ্টা করুক, এটা আসলে ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযান। সকাল থেকেই দেখা গেল সোনারপুরে রেল পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বিজেপি কর্মীরা। তারপর হেস্টিংসে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তাদের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হল। হ্যাঁ, পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ করেছে। জলকামান ছুঁড়েছে। তারপরই দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বিজেপি নেত্রীরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আর পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়লেন তাঁরা।
পুলিশ বনাম বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষে যুদ্ধক্ষেত্রের আকার ধারণ করল তিলোত্তমার রাজপথ। মিছিল শুরু হতেই হেস্টিংস এবং বড়বাজারে রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। একই পরিস্থিতি দেখা যায় সাঁতরাগাছি এবং হাওড়া ময়দানেও। নবান্ন বন্ধ। তবুও বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে অশান্তি এড়ানো গেল না। বিজেপির আন্দোলনে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল শহরের রাজপথ। জি টি রোড, হেস্টিংস, হাওড়া ময়দান সংলগ্ন এলাকায় মিছিলকে কেন্দ্র করে তুলকালাম বাঁধে। পুলিশের যাবতীয় হুঁশিয়ারি উড়িয়ে মারমুখী হয়ে ওঠে বিক্ষোভকারীরা। শুরুটা হয় সাঁতরাগাছিতে। ব্যারিকেড ভেঙে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা এগনোর চেষ্টা করতেই গোটা এলাকায় শুরু হয়ে যায় ধুন্ধুমার।
যদিও সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিজেপি’র সর্বভারতীয় যুব মোর্চার সভাপতি তেজস্ব সূর্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক হাজারের উপর কর্মী–সমর্থক আহত হয়েছেন। পাঁচশোর বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এটা গণতান্ত্রিক সরকার? আমরা বাংলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনব। এটা আজ বাংলার কাছে কালো দিন।’ তবে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়া শুরু হতেই পাল্টা মার দেয় পুলিশও। লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাসে গোটা এলাকা তখন রণক্ষেত্র। হাওড়া ময়দানের সামনে বোমাও পড়ে। সেখানে দফায় দফায় টিয়ারগ্যাস ছোঁড়া হয়। ভাঙচুর হয় পুলিশের কিয়ক্স বুথ। রাস্তায় টায়ার জ্বেলে শুরু হয় বিক্ষোভ। টিয়ারগ্যাস ছুঁড়তে হয় হেস্টিংসেও। হাওড়া ময়দানের সামনে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র। হাওড়ায় যে বিজেপি সমর্থকের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তাঁর নাম বলবিন্দর সিং। পুলিশের দাবি, ওই বিজেপি সমর্থক অর্জুন সিং শিবিরের লোক।
এই বিষয়ে কলকাতার বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘বিজেপি কোনও রাজনৈতিক দল নয়, ওটা সন্ত্রাসবাদীদের দল।’ হাওড়া ব্রিজের কাছে মিছিল পৌঁছতেই শুরু হয় আর এক দফা তুলকালাম। বিজেপি নেতৃত্বরাও পুলিশের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। দিলীপ ঘোষের ওপর লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছে। রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে সর্বত্র। তবে এরই মধ্যে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ববিধি শিকেয় উঠেছে। কেউ কিছুই মানলেন না। এই বিষয়ে আবার কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের সাফাই, আমাদের সমস্ত কর্মী মাস্ক পরে রয়েছেন। বিধি কি শুধু আমাদের জন্য? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজার হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। আমাদের শারীরিক দূরত্বের পাঠ শেখানো হচ্ছে। একই বিধি কি তাঁর (মমতার) জন্য প্রযোজ্য নয়?
তবে এদিন নবান্নে পৌঁছতে না পেরে বিজেপি নেত্রী তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘২০২১ সালে আমরা নবান্নে পৌঁছে যাব।’ তবে এরপরই হাওড়ায় বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা পড়তে থাকে। যার জন্য মিলেছে বোমার সুতলি। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি চলে হাওড়া ব্রিজেও। পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে জিটি রোডে মিছিল থেকে পুলিশের দিকে ইট ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। জখম ডানকুনি থানার এসআই। এই সমস্ত ঘটনার ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখতে ঝাড়গ্রাম থেকে ফিরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানী ভবনে যান। সেখানে ডিজি’র সঙ্গে বৈঠকে বসেন এবং ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখেন।