লকডাউনে কমবেশি অনেকেই কর্মহীন হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম দৃষ্টিহীনরা। এই লকডাউনে কর্মহীন দৃষ্টিহীনদের পাশে দাঁড়ালেন যারা, তারা নিজেরাও দৃষ্টিহীন। যারা সমস্ত বাঁধাকে দূরে সরিয়ে আজ রাজ্যের কোনও না কোনও স্কুল, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার কাজ করছেন। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যার সমাধান, অধিকার-রক্ষা এবং অবশ্যই শিক্ষা-স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য গড়ে তুলেছেন অল বেঙ্গল ব্লাইন্ড টিচারস অ্যাসোসিয়েশন। তাঁরাই এবার পাশে দাঁড়ালেন অন্যান্যদের।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গৌতম মাজি জানালেন, বছর দুই আগে গড়ে ওঠা এটিই দৃষ্টিহীন শিক্ষকদের একমাত্র সংগঠন। তবে দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবেও তাঁরা পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন না সামাজিক কর্তব্যকে। তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে এই অতিমারী অতিমারী পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা, কাজ হারানো ১৩০ জন অসহায় দৃষ্টিহীন মানুষের ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্টে ১০০০ টাকা করে সাহায্য দিয়েছেন।
এদের বেশিরভাগ ট্রেনে-বাসে ফেরি করে, গান গেয়ে কিংবা অন্যভাবে অর্থ উপার্জন করতেন। কিন্তু সেটা বন্ধ হওয়ায় এরা অনেকেই কর্মহীন। ফলে কার্যত অর্ধাহার বা অনাহারেই দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। আবার এদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো আজ সত্যিই বিপন্ন। নানা সংস্থা থেকে বাঁচার রসদ কিছু মিললেও প্রয়োজনীয় নগদ টাকার বড়োই অভাব দৃষ্টিহীন নাগরিকদের।
এই পরিস্থিতিতে মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকার সদিচ্ছাতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে অল বেঙ্গল ব্লাইন্ড টিচারস অ্যাসোসিয়েশন। শুধু বিপন্ন দৃষ্টিহীনদের জন্যই নয়, বৃহত্তর সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণতহবিলেও দিতে চলেছে সংগৃহিত অর্থের একটা বড় অংশ। তবে সংগঠনের বাইরে বিভিন্ন স্তরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অনেক মানুষ মহতী এই উদ্যোগে ভালোবেসে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন গৌতমবাবু। আর অর্থ সংগ্রহ ও প্রদান-দুটোই সম্পন্ন হয়েছে অনলাইনে সরাসরি দৃষ্টিহীনদের কাছে। আলোর দিশারী মহীয়সী নারী হেলেন কেলারের শুভ জন্মদিন ছিল রবিবার। তাঁর প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে এটাই তো যথাযোগ্য শ্রদ্ধার্ঘ্য, এমনটাই জানিয়েছেন সংগঠনের তরফে গৌতম মাঝি।