শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে কেরলের কোঝিকোড়ে। আর শনিবার ভেঙে পড়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা সম্ভব হল। এবার ব্ল্যাক বক্সের তথ্য পরীক্ষা করে জানা যাবে ঠিক কেন বিমানটি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল? দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮। শনিবার সকালে এই কথাই জানালেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। কোঝিকোড়ের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ১২৭ জনের।
বিমানের ব্ল্যাক বক্স হল ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার। ব্ল্যাকবক্সে বিমানের প্রচুর ডেটা পয়েন্ট এবং বিমানের পারফরমেন্স, গতি, ব্রেকিং ও সিস্টেম স্ট্যাটাস নথিভুক্ত থাকে। পাশাপাশি ককপিটে দুই পাইলটের কথোপকথনও রেকর্ড হয়ে যায় এখানে। তাই ব্ল্যাক বক্স থেকে বিমানের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমান থেকে ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। যার ফলে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে ধন্দ কিছুটা দূর হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সমস্তরকমের সহযোগিতা এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ ছাড়াও, দুর্ভাগ্যক্রমে বিমান দুর্ঘটনায় আহত সকলের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে রাজ্য সরকার। তাঁদের যে হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হোক না কেন, চিকিৎসার খরচ বহন করবে রাজ্য। উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যে ৭টা ৪১ মিনিটে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে যায় এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট IX–1344। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস মিশনের অধীনে দুবাই থেকে ১৮৪ জন যাত্রী নিয়ে কোঝিকোড় পৌঁছেছিল বিমানটি। এই বিমান দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন বিমানের দুই চালকই।
আর বিমানবন্দরে যাঁরা উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন, সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেকে শৈলজা। ওই বিমানের অনেক যাত্রীই করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে এমন নির্দেশ শৈলজা দিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, উদ্ধারকাজে যোগ দেওয়া সবারই কোভিড পরীক্ষা করাবে সরকার। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের যাত্রীদের সাহায্যের জন্য তিনটে বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করেছে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস।
শনিবারই কোঝিকোড় পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানও। এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ৪০ জনের করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে বলে সূত্রের খবর। শেষ পাওয়া খবর, যে বিমানটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর)। এখন ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে। এছাড়া কোঝিকোড় বিমানবন্দরের এই ১০ নম্বর রানওয়েতে যে বিমানের ওঠা–নামা করানো ঝুঁকিপূর্ণ, সেই বিষয়ে ১০ বছর আগেই সতর্ক করেছিলেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন মোহন রঙ্গনাথন।
বিমানে থাকা ১৯০ জনের মধ্যে বাকিদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিমান দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুরী বলেন, ‘প্রবল বৃষ্টির কারণে রানওয়ে স্লিপারি ছিল। বিমানবন্দরটি টেবিল টপ হওয়ার কারণে রানওয়ে স্কিড করে বাইরে গিয়ে পড়ে সেটি।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ট্যুইটে লেখেন, ‘কোঝিকোড়ের বিমান দুর্ঘটনায় গভীর মর্মাহত। যাঁরা প্রিয়জনদের হারালেন তাঁদের প্রতি রয়েছে আমার সমবেদনা ও প্রার্থনা। আহতরা দ্রুত সেরে উঠুন এই প্রার্থনাই করছি। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সরকারি আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম সাহায্য করা হবে।’