করোনা পরিষেবা নিয়ে সরকার যা বলছে, বাস্তবে কি তা হচ্ছে? এই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গে। কারণ অভিযোগ উঠেছে, অ্যাম্বুলেন্সের দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় এক সাত মাসের শিশু ও নয় বছরের করোনা আক্রান্ত পজেটিভ শিশুকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। অক্সিজেন ছাড়াই হাসপাতালের সামনে ৫০ মিনিট দাঁড়িয়ে রইল দুই শিশুর পরিবার। এমন হাড়হিম করা দৃশ্য দেখা গিয়েছে পার্ক সার্কাস এলাকায় শিশু স্বাস্থ্য নিকেতনে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক পিপি পোষাক ছাড়াই মুখে মাস্ক লাগিয়ে নিয়ে পৌঁছে দিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই দৃশ্য দেখার পর সারারাত ঘুমাতে পারিনি। আমার ছেলের চিকিৎসা চলছে এই শিশু স্বাস্থ্য নিকেতনে। মানুষের আর্থিক সাহায্যে। নিজের পকেটে থাকা এক হাজার টাকা আমি ওই শিশুর পরিবারের হাতে তুলে দিলাম। হাসপাতাল সুত্রে খবর, এদিন সন্ধ্যায় চিকিৎসা করাতে আসা দুই শিশুর করোনা পজিটিভ মেলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। রাত ১২টার নাগাদ এসে পৌঁছয় আই সি ইউ যুক্ত অ্যাম্বুলেন্স।
আরও অভিযোগ, চালক ও সহকারী দু’জনেই পিপি পরিহিত ছিল। হাসপাতালের চিকিৎসক প্রথমে নয় বছরের শিশুকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার ব্যবস্থা করেন। সঙ্গে ছিল তার মা। অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়। এরপর সাত মাসের শিশু কোলে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন শিশুটির মা। তখনই ঘটে বিপত্তি। ভাড়া নিয়ে রোগীর পরিবারের সঙ্গে দর–কষাকষি চলতে থাকে। যার মধ্যস্থতা করতে দেখা যায় চিকিৎসককে। অবশেষে নয় হাজার টাকা দিতে না পারায় দুই শিশুর মুখ থেকে খুলে দেওয়া হয় অক্সিজেনের সংযোগ। নামিয়ে দেওয়া হয় তাদের। মুখে লাগানো অক্সিজেন ছাড়া মাস্ক–সহ শিশু কোলে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দুই শিশুর মাকে।
এখানেই শেষ নয়। তারপর প্রায় ৩০ মিনিট পর সেই দৃশ্য দেখে নিজেই এগিয়ে আসেন হাসপাতালে সাধারণ অ্যাম্বুলেন্স চালক। পিপি পোশাক ছাড়া শুধু মাত্র মুখে মাস্ক ছাড়াই দুই করোনা পজিটিভ শিশুকে নিয়ে যায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি জানান, আমার ছেলের চিকিৎসা করাতে এসে আজ ১৩টা দিন এই শিশু স্বাস্থ্য নিকেতনের সামনে একটি গাছের নিচে পড়ে আছি। এমন ঘটনা দেখে এগিয়ে যাই। পারিনি দর–কষাকষি করা অ্যাম্বুলেন্সকে রাজি করাতে। তবে প্রশ্ন একটা সরকারি ঘোষণার সঙ্গে বাস্তব চিত্র মিলছে কোথায়? কেন অসহায় রোগির জীবন নিয়ে এই নোংরা খেলা চলছে?