জুন মাসে মাত্র ৪০ দিনের ছুটিতে নদীয়ার তেহট্টে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন বাঙালি জওয়ান সুবোধ ঘোষ। তখন অবশ্য দেশজুড়ে লকডাউন চলছিল। তাই আত্মীয়দের কথা দিয়েছিলেন, ডিসেম্বরে আবার আসবেন। এই আসাটা হবে তবে কফিনবন্দি হয়ে। ডিসেম্বর মাসে মেয়ের অন্নপ্রাসন। ছুটির জন্য দরখাস্তও করেছিলেন। এই ছুটিটাই যেন সবকিছু থেকে ছুটি হয়ে গেল। সীমান্তে পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে আর তার জেরে শুক্রবার দুপুরে কাশ্মীরে পাকিস্তান সেনার গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান সুবোধ ঘোষ (২৪)। নদীয়ার তেহট্টের রঘুনাথপুরের মানুষরা গ্রামের ছেলের এভাবে চলে যাওয়া যেন মেনে নিতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবারও সুবোধের সঙ্গে কথা হয়েছিল মা ও স্ত্রীর। কিন্তু শুক্রবার সারাদিন কথা হয়নি। মা ও স্ত্রী বারবার ফোন করছিলেন। কিন্তু সুবোধের ফোন সুইচ অফ ছিল। শুক্রবার বিকেলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ফোন করে জানানো হয়, সুবোধ শহিদ হয়েছেন। বিকেলে তাঁর শহিদ হওয়ার খবর পৌঁছয় বাড়িতে। দীপাবলির আগেই ঘোর অন্ধকার নেমে আসে গোটা গ্রামে! বিয়ের এক বছরের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে, সদ্যোজাত সন্তানকে আঁকড়ে ধরে কান্না থামতে চাইছে না সুবোধের স্ত্রী অনিন্দিতার।
শুক্রবার ছিল ভূত চতুর্দশী। কিন্তু চোদ্দ প্রদীপের আলো নয়, নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেল গ্রামের ছোট্ট বাড়িটায়। মাত্র ২৪ বছরের তরতাজা ছেলেকে হারিয়ে গোটা গ্রামই বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। নদিয়ার বাসিন্দা গৌরাঙ্গ ঘোষ ও বাসন্তী ঘোষের একমাত্র ছেলে সুবোধ ঘোষ। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিয়ে করেছিলেন তিন বছর আগে। তিন মাসের কন্যাসন্তান রয়েছে তাঁর। বাবার সহচর্য কী, সেটা আর বোঝা হবে না ছোট্ট মেয়ের। স্ত্রী, মেয়ে, মা ও বাড়ির সবার খবর রাখতেন নিয়মিত। সুবোধের স্ত্রী অনিন্দিতা কিছুতেই স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। দেশ তাঁর আত্মবলিদান ভুলবে না ঠিকই কিন্তু পরিবার তাঁকে হারিয়ে দিশেহারা।
কাশ্মীর থেকে একজন মেজর ফোন করেন। তিনিই অনিন্দিতাকে দুঃসংবাদটা দেন। বাসন্তীদেবীর কথায়, ‘বউমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে আমি ছেলে হারানোর খবর শুনি।’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই উত্তর কাশ্মীরের উরি সেক্টরে পাক বাহিনীর হানা শুরু হয়। পাল্টা জবাব দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীও। গোলাগুলিতে মৃত্যু হয়েছে ৫ ভারতীয় সেনার, মারা গিয়েছেন ৬ জন নিরীহ গ্রামবাসীও। আর পাকিস্তানের ১১ জনের মৃত্যু হয়। গৌরাঙ্গবাবুদের আগে টালির ছাউনির ছোট্ট একটা ঘর ছিল। সুবোধ চাকরি পাওয়ার সেটি দোতলা পাকা বাড়ি হয়। সামান্য কিছু কাজ এখনও বাকি। যেটা বাকিই রয়ে গেল।