জেলা ব্রেকিং নিউজ

নলেন গুড়ের নেপথ্যে থাকা ‘শিউলি’দের জীবন-কথা

শীতে নলেন গুড়ের স্বাদ নেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু এই নলেন গুড় তৈরির নেপথ্যে যারা রয়েছেন তাদের যন্ত্রনাদীর্ণ জীবনের কাহিনী-কথা কেউ কি কখনো কান পেতে শুনেছে?

খেজুরের গাছ থেকে যারা খেজুর রস সংগ্রহ করেন তাদের এক কথায় বলা হয় ‘শিউলি’। এই শিউলিদের জীবন বড়ই কঠিন। সংবৎসর তারা অন্যের জমিতে ক্ষেতমজুর কিংবা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে সংসার চালান। শীত এলেই একটু বেশি উপার্জনের আশায় তারা নেমে পড়েন ঝুঁকিপূর্ণ এই থেকে নলেন গুড় তৈরির কাজে।

খেজুরের রস থেকে নলেন গুড় তৈরি একপ্রকার ক্ষুদ্র শিল্প হলেও এই শিল্প থেকে শিউলিদের উৎসাহ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগণার গোপালনগর এলাকায় হাতেগোনা দু-তিনজন শিউলি অবশিষ্ট রয়েছেন। প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরেই এই কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন নূতনগ্রামের চারুপদ সরকার। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন,- ‘শীত এলে একপ্রকার মনের টানে নলেন গুড় তৈরির কাজে নেমে পড়ি। খুব কষ্টসাধ্য এই কাজ। লোক দিয়ে কাজ করালে লাভ বলে কিছুই থাকেনা। আর পরিবারের কেউ নতুন করে এ কাজ শিখতে চায় না। তাই একদিন হয়তো সকলের অনাদর ও সহযোগিতার অভাবে শিউলিরা সত্যি সত্যিই হারিয়ে যাবে।’‌

অপরদিকে আর এক শিউলি রামকৃষ্ণ বাছাড় বলেন, ‘এই শিল্প বাঁচাতে সরকার শিউলিদের পাশে না থাকলে নলেন গুড় একদিন বাস্তবে আর পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে বইয়ের পাতায়।’ পাশাপাশি তার আক্ষেপ, প্রচণ্ড পরিশ্রম করে নলেন গুড় তৈরি করলেও তারা ন্যায্য দাম পাননা। কারণ শীতের মরসুমে বাজারে আসল নলেন গুড়ের পাশাপাশি প্রচুর ভেজাল ঢুকে পড়ে। যার জেরে মার খান খাঁটি নলেন গুড় প্রস্তুতকারকরা।

শিউলিদের কথায়, এবছর ডিসেম্বরের শুরুতে গভীর নিম্নচাপের কারণে চাষের পাশাপাশি খেজুর গাছের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। সে কারণে এখনো পর্যন্ত খেজুর গাছ থেকে সন্তোষজনকভাবে রস পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সুদিনের আশায় আলো-আঁধারি দিন গুজরান করে চলেছেন শিউলিরা।