গ্রাম বাংলার নাম সংকীর্তন অনুষ্ঠানে হরিলুঠ দেওয়া হয় বাতাসা ছড়িয়ে। বাতাসা আর এক গ্লাস ঠান্ডা জল পান করলে ক্লান্তিও দূর হয়। কিন্তু বাতাসা তো আজ প্রায় অবলুপ্তির পথে। যে কোন শুভ কাজে, মন্দিরে- মসজিদ-গুরুদ্বার অথবা পূজো–অর্চনা, মাঙ্গলিক কাজে বাতাসার ব্যবহার হয়।
ইদানিং রাজনৈতিক তরজাতেও বাতাসার নাম বারবার উঠে এসেছে। ভাঙড়ের কাশীপুর, মিনাখার মালঞ্চ, জীবনতলা, বারুইপুরে কিছু জায়গায় এখনও বাতাসা তৈরি হয়। ছোট ছোট হাঁড়ি, শীতল পাটির চাটাই আর কাঠ কয়লার উনুনে প্রান্তিক বাতাসা শিল্পীরা আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন গ্রামীণ এই শিল্পকে।
কাশীপুর থানার অদূরেই দাস পাড়া। সেখানেই ১৯ বছর ধরে নিজের বাড়িতে কারখানা তৈরি করে বাতাসা তৈরি করে আসছেন সুভাষ দাস। তাঁর কথায়, ‘কয়লার গন গনে আঁচের পাশে বসে গুড়, চিনি জ্বাল দিতে হয়। গরম কড়াই থেকে ফুটন্ত রস চাটাইতে ঢালতে হয়। ঘাড় মুখ গুঁজে আট দশ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এখনকার প্রজন্ম আর এই সব কাজ শিখতে আগ্রহী নয়।’
প্রমান সাইজের অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে দেড় কেজি চিনি, ২০০ গ্রাম ভেলিগুড় ও এক লিটার জলের সংমিশ্রণ গনগনে আঁচে ফোটাতে হয়। সেই জল উদ্বায়ী হয়ে গেলে গাড় রসে পূর্ণ হাঁড়িটি আঁচ থেকে নামিয়ে নেওয়া হয়। তারপর কাঠ বা বাঁশের ঝাড়ু (খুন্তি জাতীয়) দিয়ে হাঁড়িটিকে ভালভাবে নাড়া চাড়া করলে বীজ বা গেঁজালো রস তৈরি হয়। এরপর হাঁড়িটিকে সাঁড়াশি জাতীয় যন্ত্রের সাহায্যে ধরে শীতল পাটির চেটাইয়ের ওপর রসের ছোট ছোট ফোটা ফেলা হয়। রসালো ফোটা গুলিই হাওয়ার সংস্পর্শে ঠান্ডা হয়ে বাতাসার রূপ নেয়।
তারপর সেগুলি প্যাকেটজাত করার কাজ হয়। এই ব্যবসায় আয় নেহাত মন্দ নয়। এক কেজি বাতাসা ৫২ টাকা দরে পাইকারী হিসাবে বিক্রি হয়। মুদি দোকানে তা খুচরো বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজি দরে। রোজ সাত আট ঘণ্টা কাজ করলে একজন কর্মচারী কম বেশি ১০০ থেকে ১২০ কেজি বাতাসা তৈরি করতে পারে। যা করতে খরচ পড়ে ৫০০০ টাকা। আর বিক্রি হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা।
ভাঙড়ের স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান তানিয়া বিবি বলেন, ‘সুভাষবাবু দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সঙ্গে এই ব্যবসা করছেন জানি। ওঁর বাতাসা ভাঙড়ের বাইরে বাংলাদেশ, দুবাইতেও গিয়েছে বলে শুনেছি।’ কিন্তু দক্ষ কর্মীর অভাব ও নতুন প্রজন্মর এই কাজের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ফলে অবলুপ্তির পথে বাংলার বাতাসা শিল্প।