এ যেন সিনেমাকেও হার মানায়। মা আর ছেলের দেখা হল ৭০ বছর পরে। ঘটনাটি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাববাদ গ্রামের। হারিয়ে যাওয়ার প্রায় ৭০ বছর পর মায়ের কাছে ফিরলেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি। এসে বসলেন তাঁর মা আমরো বেওয়ার হাত ধরে। তখন সেখানে সবার চোখে আনন্দে জল। তিনি ফিরলেন তার বোন ঝর্না বেগমের বাড়িতে। এত বছর পরে হারিয়ে যাওয়া ছেলের দেখা পেতেই একশ বছর বয়সী মা তাঁর আশি বছর বয়সী ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন পরম স্নেহে। সেই সময় উপস্থিত কেউ চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দা কুদ্দুস। বয়স যখন ৬ বছর, তখন কুদ্দুসের বাবা মারা যান। কুদ্দুসকে পড়াশোনার জন্য তাঁর পিসেমশাই পেশায় পুলিশের দারোগা আব্দুল আওয়ালের কাছে রাজশাহীর বাগমারায় পাঠানো হয়। সেখানে পিসির বকা খেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান কুদ্দুস। তখন তাঁর ১০ বছর বয়স।
জানা গিয়েছে, গত ১২ এপ্রিল আইয়ুব আলী নামে আত্রাইয়ের সিংড়া বাজারের একজন তাঁর ফেসবুকে কুদ্দুসকে নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তাঁর বাবা, গ্রাম ও উপজেলার নাম উল্লেখ করে আত্মীয়দের সন্ধান চাওয়া হয়। শেষে তাঁদের সন্ধান পাওয়া যায়। শনিবার মায়ের কাছে পৌঁছন তিনি। কুদ্দুসের ছেলে সোহেল মুন্সী, সোহেলের স্ত্রী, সোহেলের ছেলে-মেয়ে এবং আইয়ুব আলী–সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ছেলেকে পেয়ে মা বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল, ছেলে ফিরে আসবে।’ কুদ্দুস বলেন, ‘আজ মায়ের পাশে বসলাম। মনের মধ্যে যে কত আনন্দ হচ্ছে তা ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারব না।’ কুদ্দুস জানান যে তিনি পিসির বকুনি খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে চলে যান নওগাঁর আত্রাইয়ের সিংহগ্রামে। সেখানে দুই মহিলার যত্নে বেড়ে উঠে আত্রাইয়ের চৌবাড়ি গ্রামে বিয়ে করেন। তাঁর তিন ছেলে ও চার মেয়ে। এরপর বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করে সেখানেই থেকে যান তিনি।
আইয়ুব আলী জানান, তিনি আবদুল কুদ্দুসকে আগে থেকে চিনতেন এবং মামা বলে ডাকতেন। তাঁর কথা জানার পর তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। মা-ছেলের দেখা হওয়ার দৃশ্য দেখে কতটা আনন্দিত তিনি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না।