অসম–মিজোরামের সীমান্ত উত্তপ্ত অশান্তিতে। দুই রাজ্যের মানুষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন বহু। এই সমস্যার সুরাহা খুঁজতে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করল দুই রাজ্যের প্রশাসন। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর এবং গাড়ি। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ফোনে কথা বলেছেন। বৈঠকের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রও।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দপ্তরকে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ফোনে তিনি কথা বলেছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাংগা–র সঙ্গে। অসমের লায়লাপুরের কাছে সীমান্তে একটি কোভিড পরীক্ষাকেন্দ্র তৈরি করে মিজোরাম প্রশাসন। যে জায়গায় ওই পরীক্ষাকেন্দ্রটি তৈরি করা হয়, অসমের দাবি সেটা তাদের জমি। মিজোরামের দাবি, জোর করে তাদের জমি জবরদখল করতে চাইছে অসম।
অসম সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কীভাবে দুই রাজ্যের মধ্যে সম্পর্কে ভালো রাখা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে সর্বানন্দ সোনোওয়াল এবং জোরামথাংগার মধ্যে। জোরামথাংগাও অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন দুই রাজ্যের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যাতে শান্তি বজায় রাখা যায় সে বিষয়ে মিজোরামও কড়া নজর রাখবে। রাজ্যে যে সব ট্রাক আসছে, তাদের চালকদের কোভিড পরীক্ষা করানোর জন্য এই কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রটি তৈরি করতে গেলে অসমের অনুমতি নেওয়ার দরকার ছিল, যেটা মিজোরাম করেনি বলে অভিযোগ। ফলে অসম প্রশাসন বাধা দেয়।
মিজোরাম সরকারের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হয়েছে কেন্দ্রের সঙ্গে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রিসভা এই বিষয়ে বিশেষ বৈঠকে বসেছে এবং তার জন্যে দায়ী অসম সরকারের সীমা–লঙ্ঘন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লায়লাপুর সীমান্তে মিজোরামের কয়েকজন যুবক আসেন এবং ট্রাক চালক ও গ্রামবাসীদের ওপরে অতর্কিতে হামলা চালান। অসংখ্য ট্রাক এবং বেশ কয়েকটি ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লায়লাপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা এবার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এতেই ছড়িয়ে পড়ে হিংসা।
সোমবার দুই রাজ্যের প্রশাসের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার ভাল্লা। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন অসম এবং মিজোরামের প্রধান সচিবরা। পড়শি কাছাড় জেলাতেও পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। ওই জেলায় রাতাবাড়ি ও পাথরখন্ডি এলাকায় সীমানা-বিবাদ বহু দিনের। সে কারণে দুই রাজ্যের তরফে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে অসম পুলিশের অভিযোগ, মিজোরাম পুলিশ তাদের এলাকায় জোর করে ঢুকে চেকপয়েন্ট তৈরি করার চেষ্টা করছে।
সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার জন্যে দুই রাজ্যই ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে হিংসাবিধ্বস্ত মিজোরামের ভেরেংতে গ্রাম এবং অসমের লায়লাপুরে। এই হিংসার কারণে ভেরেংতে সীমান্তে আটকে পড়েছে কয়েক–শো ট্রাক, যেগুলি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেয় মিজোরামে। অগ্নিগর্ভ এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য রবিবার ফোনে কথা বলেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোওয়াল এবং মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা। গোটা ঘটনার ওপরে নজর রাখছে কেন্দ্র।