শনিবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৫ তৃণমূল নেতা যোগ দিল গেরুয়া শিবিরে। সঙ্গে দল বদলালেন একঝাঁক সাংসদ, বিধায়ক ও বিশিষ্ট নেতৃত্ব। আর তারপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নতুন সুরে গলা চড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন তিনি বলেন, ‘সেই দিন বেশি দেরি নেই, যখন তৃণমূলে একা থাকবেন দিদি।’ এদিন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার যে অভিযোগ তৃণমূল তুলেছে তারও বিরোধিতা করেন অমিত শাহ। সদর্পে ঘোষণা করেন, ২০২১ সালের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ২০০–র বেশি আসন পাবে বিজেপি।
শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কলেজ মাঠের সভায় শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও বিজেপিতে যোগ দিলেন ৯ বর্তমান বিধায়ক, এক সাংসদ, এক প্রাক্তন সাংসদ ও রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রী। পাশাপাশি যোগ দিলেন একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বও। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ছয় সংখ্যালঘু নেতার দলবদল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এদিন ভাষণের শুরুতে, শহিদ ক্ষুদিরাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মহাপুরুষদের স্মরণ করেন শাহ। তার পর শুভেন্দুকে আক্রমণ করায় পালটা তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি জানান, শুভেন্দুকে যারা বিশ্বাসঘাতক বলছেন তাদের কাছে প্রশ্ন, তারা কি দল ভাঙেননি। তৃণমূল কংগ্রেস তাহলে কীভাবে তৈরি হলো? শনিবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠে শুধুমাত্র তৃণমূলের ভাঙনই রাজ্যের মানুষ দেখল না, বরং দেখা গেল কংগ্রেস ও সিপিএম শিবিরেও ভাঙন ধরিয়ে দিয়েছে বিজেপি।
তৃণমূলকে আক্রমণ করে শাহ বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের স্লোগান মা–মাটি–মানুষ, আসলে তোলাবাজি, তোষণ ও স্বজনপোষণে পরিণত হয়েছে।’ মমতাকে উদ্দেশ্য করে শাহ বলেন, ‘আজ রাজ্যের সাংসদ, বিধায়ক–সহ একঝাঁক নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। দিদি, ভোট আসতে দিন, তৃণমূলে শুধু আপনি একা থাকবেন।’ ছয় নেতার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নামটাই হল কবিরুল ইসলাম। তিনি তৃণমূলের রাজ্য সংখ্যালঘু সেলের সম্পাদক ছিলেন। শুক্রবারই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর শনিবার অমিত শাহের সভা থেকে বিজেপি’র পতাকা হাতে তুলে নিলেন। এছাড়া রয়েছেন রাজ্যস্তরের তৃণমূল নেতা অধ্যাপক ওইদুল হক, হুগলির প্রাক্তন বিধায়ক পারভেজ রহমান, বীরভূমের দাপুটে নেতা করম হুসেন খান, হুগলির নেতা আলমগীর মোল্লা। তাঁদের যোগদান নিসন্দেহে বাংলায় গেরুয়া শিবিরের সংগঠন মজবুত করতে সাহায্য করবে।
এদিনের সভা থেকে ফের রাজ্যে ২০০–র বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসার হুঙ্কার ছাড়েন শাহ। বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিজয়রথ কেউ রুখতে পারবে না। দলবদল করা ন’জন বর্তমান বিধায়কের মধ্যে ছ’জনই তৃণমূলের। রয়েছেন বনশ্রী মাইতি (উত্তর কাঁথি), সৈকত পাঁজা (পূর্ব বর্ধমান), বিশ্বজিৎ কুণ্ডু (কালনা), শীলভদ্র দত্ত (ব্যারাকপুর), অশোক দিন্দা (তমলুক), সুকরা মুন্ডা (নাগরাকাটা)। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস থেকে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিলেন তাপসি মণ্ডল (হলদিয়া), দিপালী বিশ্বাস (গাজল),সুদীপ মুখোপাধ্যায় (পুরুলিয়া)। রয়েছেন বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মণ্ডল, প্রাক্তন সাংসদ দশরথ তিরকে ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এছাড়াও যোগ দিলেন তৃণমূলের রাজ্যস্তরের নেতা কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরি, আশিস দত্ত ও বাপ্পা মজুমদার, কার্তিক বিশ্বাস, অসিত দত্ত-সহ একঝাঁক নেতা।
মেদিনীপুরের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অমিত শাহের প্রশ্ন, কেন এত মানুষ আপনার দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন? তা একবার ভেবে দেখুন। ভাইপোকে গুরুত্ব দিয়ে অন্যদের অপমান করছেন। তাই রাজ্যের নেতারা তৃণমূল ছেড়ে পালাচ্ছেন। অমিত শাহরে আহ্বান, বাংলার মানুষকে বলব, আপনারা কংগ্রেসকে তিন দশক সময় দিয়েছেন, সিপিএমকেও ৩ দশক দিয়েছেন, তৃণমূলকে দিয়েছেন ১০ বছর। আপনারা বিজেপিকে মাত্র ৫ বছর দিন। মমতা সরকারকে তুলে ফেলে দিন।