দেশ লিড নিউজ

রাত পোহালেই বর্ষবরণ, থাকছে প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তি

বছর শুরু হয়েছিল সিএএ–এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের উত্তাপে। তার রেশ মেলানোর আগেই আছড়ে পড়ল করোনাভাইরাস। চেনা পৃথিবীটা হঠাৎ অচেনা হয়ে গেল। লকডাউনে কর্মহীন লক্ষ লক্ষ মানুষ। কপালে জুটল পরিযায়ী’র তকমা। রেললাইনকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভেবে মালগাড়ির চাকায় পিষ্ট হলেন অনেকে। ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে সামাজিক দূরত্ব। আর হাসপাতালে মানুষের মৃত্যুমিছিল। করোনার থাবায় মানুষ যখন দিশেহারা তখনই বাংলায় আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় আমফান। গৃহহীন হলেন কয়েক লক্ষ মানুষ। সব মিলিয়ে ২০২০ সালটা বাঙালির কাছে অভিশপ্ত বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
এখানেই শেষ নয়, ডিসেম্বর মাসের আগেই ভারতে এসে থাকতে পারে করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি বলে মনে করেন অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সায়ান্সেসের ডিরেক্টর রনদীপ গুলেরিয়া। তাঁর অনুমান, নতুন এই প্রজাতির খোঁজ সেপ্টেম্বর মাসের শেষে ব্রিটেনে পাওয়া গিয়েছিল। তাই ভারতে নভেম্বর বা তারও আগে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এখন এই নতুন জাতের করোনা টের পাওয়া গিয়েছে। ফলে মানুষ যখন সামান্য থিতু হয়ে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার কথা ভাবছেন, তখন নতুন জাতের করোনা সব বানচাল করে দিতে হাজির।
প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তির মধ্যে বর্ষ বিদায় করতে বসে অনুপমের গানের সেই লাইনগুলিই মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছে, ‘‌যেটা ছিল না ছিল না সেটা না পাওয়াই থাক। সব পেলে নষ্ট জীবন।’‌ গুলেরিয়ার কথায়, নভেম্বর মাসের শেষে ব্রিটেন থেকে ভারতে যাঁরা এসে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ভাইরাসের নমুনা জেনোম সিকুয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ফলে তার আগে কী হয়েছে, সেটা বোঝা সম্ভব নয়।
এখন প্রশ্ন, তাহলে ২০২১ সালও কি এভাবে কাটবে?‌ উত্তর অবশ্য সময় বলে দেবে। আপাতত করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন, সেই চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মীদের অনেকেই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। বহু পুলিশকর্মী, সরকারি আধিকারিক, সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহক তাঁদের কর্তব্য পালন করতে গিয়ে কোভিডের বলি হয়েছেন।
বাংলা দেখেছে এই বছরে নক্ষত্রপতনও। প্রয়াত হয়েছেন ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য–রাজনীতির বর্ণময় চরিত্র সোমেন মিত্র, সাহিত্যিক দেবেশ রায়, কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, অনুবাদক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। কিংবদন্তি ফুটবলার পিকে–চুনির প্রয়াণ।
সুতরাং প্রাপ্তির থেকে অপ্রাপ্তির ঝুলিই ভরে গেল হিসেব–নিকেশ করে। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। এগিয়ে যেতে হবে। আর যাতে এমন অপ্রাপ্তির ঝুলি নিয়ে বছর শেষ করতে না হয়। আর যাতে বাড়িতে বসে থেকে সময় গুণতে না হয়। মানুষের মৃত্যুমিছিল যেন গ্রাস না করে। তাই ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করার পাশাপাশি অঙ্গীকার করতে হবে এই ভাইরাসের নির্মূল যাতে করা যায়। আর সেটাই হবে প্রাপ্তি।