দেশ লিড নিউজ

খাওয়ার রসদ বেচে স্মার্টফোন!‌ অনলাইন ক্লাসের তাগিদ

অনলাইনে ক্লাস, পড়াশোনা, পরীক্ষা এবং করোনা পরিস্থিতিতে এটাই এখন নিউ নর্ম্যাল। কিন্তু ১৩০ কোটির দেশে এখনও গরীব–গুর্বো মানুষগুলির দিন আনা, দিন খাওয়ার সংসার, সেখানে এই নিউ নর্ম্যালের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য ক’‌জনের আছে? এই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অভিভাবকরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এই পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোজ নির্ধারিত সময়ে শুরু হচ্ছে অনলাইন ক্লাস। কিন্তু এই অনলাইন ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজন স্মার্টফোন। সেটা কিনতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে বহু ছাত্র–ছাত্রীর পরিবার।
জানা গিয়েছে, অথচ ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা শেখানোর, মানুষের মতো মানুষ করে তোলার স্বপ্ন দেখেন বাবা–মায়েরা। সেই স্বপ্নপূরণের তাগিদেই হয়তো মরিয়া হয়ে ওঠেন কুলদীপ কুমারের মতো কিছু মানুষ। যে গরুর দুধ বেচে বাড়ির লোকগুলোর মুখে দু’‌বেলা দু’‌মুঠো অন্ন তুলে দিতেন, সেই গরু বেচেই স্মার্টফোন কেনেন হিমাচল প্রদেশের কুলদীপ! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। শুধুমাত্র একটা স্মার্টফোন না থাকার জন্য কত ছাত্র–ছাত্রীকে মাঝপথে পড়াশোনায় দাড়ি টানতে হচ্ছে! দেশজুড়ে হতাশায় ছাত্র–ছাত্রীদের আত্মহত্যার ঘটনাও সামনে এসেছে। স্মার্টফোন নেই মানে অনলাইন ক্লাসে যোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। তা হলে পড়াশোনা হবে কী করে!
নিরুপায় বাবা চাননি, স্মার্টফোনের অভাবে ছেলে দুটোর অনলাইন ক্লাস, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাক। হিমাচলের কাংড়ায় জ্বালামুখির গুমর গ্রামের এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো দেশকে। প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ভারত–এর বাস্তবায়ন নিয়েও। উপায় ছিল না কুলদীপের কাছেও। তিনি সন্তানদের পড়াশোনা শেখাতে চেয়েছিলেন। মাত্র একটা স্মার্টফোনের জন্য তিনি তাদের পড়াশোনা মাঝপথে বন্ধ করতে রাজি হননি। তাই নিজের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে সন্তানদের স্মার্টফোন কিনে দেন। শেষ সম্বল বলতে পোষা গরু। আর কিছুই ছিল না তাঁর কাছে বিক্রি করার মতো। সন্তানদের বাবা, দায়িত্ব অনেক। যেভাবেই হোক দায়িত্ব পালন তো করতে হবে।
কুলদীপের দুই ছেলের স্কুল বন্ধ। একজন চতুর্থ আর অন্যজন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। স্কুল থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হলে কুলদীপের দুই ছেলেকে অনলাইন ক্লাস করতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন স্মার্ট ফোন। হন্যে হয়ে ফোনের টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করেছেন বাবা। ৬ হাজার টাকার জন্য ব্যাঙ্কে গিয়েছেন, মহাজনের কাছে হাত পেতেছেন। কিন্তু মাটির বাড়িতে কোনওক্রমে দিন গুজরান করা গরীব কুলদীপকে কেউ একটা টাকাও দিতে রাজি হননি। বাধ্য হয়ে বাড়ির একমাত্র আয়ের উৎস, দুধেল গাভিটাকে মাত্র ৬,০০০ টাকায় বেচে দেন কুলদীপ। সেই টাকায় ছেলেদের জন্য আসে স্মার্ট ফোন! তবে জ্বালামুখীর বিধায়ক রমেশ ধাওয়ালা সংবাদমাধ্যমের থেকে কুলদীপের দুরাবস্থা জানার পর এগিয়ে এসেছেন। এমন আত্মত্যাগ বোধহয় মা–বাবাই করতে পারেন।