যোগী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠল গোটা দেশ। কারণ গণধর্ষণ, নারকীয় নির্যাতন, মৃত্যুতেও শেষ হল না হাতরাস নির্যাতিতার করুণ পরিণতি। সৎকারেও জুটল চরম অপমান, অবহেলা। দিল্লির হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া হাতরাসের ধর্ষিতা তরুণীর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে শেষ বিদায় জানাতেই পারলেন না। কারণ বিতর্কে জড়ালো উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। অভিযোগ, পরিবারের সদস্যদের আটকে রেখে মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই তরুণীর শেষকৃত্য করল পুলিশ।
পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে এই বিষয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে তিনি কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দলও গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। হাথরাস নিয়ে যোগীর সরকারকে একহাত নিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তাঁর দাবি, যোগী আদিত্যনাথের ক্ষমতায় থাকার আর কোনও নৈতিক অধিকার নেই।
ভিডিওয়ে দেখা গিয়েছে, একটি অ্যাম্বুলেন্সের ওপরে আছড়ে পড়ছেন এক মহিলা। ওই অ্যাম্বুলেন্সেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ওই নির্যাতিতা তরুণীর দেহ। বোঝা যায় যে, বারবার সেটাকে আটকানোর চেষ্টা করছিলেন তাঁর মা। কিন্তু দিল্লি থেকে জবরদস্তি দেহ নিয়ে যায় পুলিশ। মধ্যরাতেই বাড়ির অদূরে খেতে দাহ করে দেওয়া হয় তাঁর দেহ। সবমিলিয়ে পরিজনহীন শেষকৃত্য হল দলিত তরুণীর।
পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তরুণীর মায়ের কোনও কথাই শোনেনি। এর পর তরুণীর দাদা অভিযোগ করেন, তাঁদের না জানিয়েই ওই তরুণীর দেহ নিয়ে চলে যায় পুলিশ। সন্তানহারা পরিবারের ওপরে অকথ্য জুলুম চালানো হয়। দিল্লির হাসপাতালে ধর্নাতেও হানা দেয় পুলিশ। জবরদস্তি বাবা ভাইকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামে। মায়ের আকুতিতেও কর্নপাত করা হয়নি। বাড়িতে পৌঁছলই না ধর্ষিতার দেহ।
হাথরাস নিয়ে বুধবারই প্রথম ট্যুইটটি করেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি লেখেন, হাথরাসের তরুণীর বাবাকে যখন খবর দেওয়া হয় যে, তাঁর কন্যার মৃ্ত্যু হয়েছে, তখন আমি তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। তাঁকে চিত্কার করে কাঁদতে শুনলাম। তিনি আমায় বললেন, মেয়ের জন্য তিনি শুধু ন্যায়বিচার চান। গত রাতে মেয়ের দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে এনে শেষকৃত্য করার অধিকারও তাঁর থেকে কেড়ে নেওয়া হয়।
শেষকৃত্যের জায়গায় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও যাতে ঘেঁষতে না পারেন, সে কারণে মানববন্ধন তৈরি করে পুলিশ। স্থানীয়রা বলছে, শুধুমাত্র পুলিশের উপস্থিতিতেই রাত আড়াইটে নাগাদ ওই তরুণীর শেষকৃত্য করে ফেলা হয়। ঠিক কী কারণে ওই তরুণীর দেহ ছিনতাই করার প্রয়োজন হয়ে পড়ল পুলিশের সেটাই ভাবাচ্ছে সবাইকে। তাহলে কী এখানে শাসকদলের যোগ ছিল? প্রমাণ লোপাট করতেই কী এটা করা হল? নাকি মৃতদেহ নিয়ে দলিত সমাজে শোরগোল পড়ে যেত বলেই এটা করা হল? উঠছে প্রশ্ন।
যোগীরাজ্যের হাথরাস গণধর্ষণে তোলপাড় হয়েছে গোটা দেশ। আর রাতের জুলুমে আগুনে কার্যত ঘি ঢালল যোগীর পুলিশ। বিক্ষোভে ফুঁসছে নাগরিক সমাজ। রাজধানীতে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। অবরোধে ভীম আর্মি। নিন্দার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। গোটা ঘটনায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ার পর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই ঘটনার তদন্তে বিশেষ তদন্তকালী দল গঠন করা হয়েছে। এই দলে থাকছেন স্বরাষ্ট্রসচিব ভাগওয়ান স্বরূপ, ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করবে সিট। এই মামলার শুনানি ফাস্ট–ট্র্যাক কোর্টে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
