আন্তর্জাতিক

‘‌কাপুরুষের মতো মরেছে বাগদাদি’‌

আইএস–এর প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল–বাগদাদির নিকেশ হওয়ার কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস থেকে টিভিতে সম্প্রচারিত ভাষণে ট্রাম্প জানান, ‌গত রাতে আমেরিকা বিশ্বের এক নম্বর জঙ্গি নেতার ন্যায়বিচার করেছে। ও একজন দুর্বল এবং অনৈতিক মানুষ ছিল। এখন ও আর নেই। ঠিক ছায়াছবির মতোই সিরিয়ায় এক বিপজ্জনক এবং দুঃসাহসিক অভিযানে আমেরিকার স্পেশাল অপারেশনস্‌ বাহিনীর হেলিকপ্টাররা তাকে তাড়া করেছিল। ভীতু কুকুরের মতো পালাতে গিয়ে অন্ধ সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়েছিল বাগদাদি। নায়কের মতো নয়। ও মরেছে কাপুরুষের মতো। আর্তনাদ করতে করতে, নিজের সন্তানদেরও নিজের সঙ্গে মরতে বাধ্য করেছে।
ওয়ার রুমে বসে বাগদাদির ঘাঁটিতে মার্কিন বাহিনীর অভিযানের দৃশ্য লাইভ দেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাতে ‘উচ্ছ্বসিত’ তিনি। সেই অভিজ্ঞতা কেমন তাও জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘মনে হচ্ছিল যেন সিনেমা দেখছি।’ সুড়ঙ্গের ভেতর বাগদাদির সঙ্গে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মৃত তিনজনই তার সন্তান। আইনত বাগদাদির ৬ জন সন্তান আছে। বাগদাদির মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঘটনাস্থলেই মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষা করেন মার্কিন সেনার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। তারপর নিশ্চিত হয়েই পেন্টাগনে সেকথা জানানো হয়।
২০১৪ সালে নিজেকে ‘খলিফা’ হিসাবে ঘোষণা করেছিল আইএস-এর প্রধান বাগদাদি। সেই সময় থেকেই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিল সে। গত পাঁচ বছর ধরে তার পিছু পিছু ঘুরছেন মার্কিন বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে সাফল্য পেলেন তাঁরা। পাঁচ বছর আগে সিরিয়ার মসজিদ থেকে নিজের স্বঘোষিত সাম্রাজ্য ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গি গোষ্ঠী শুরু করেছিল বাগদাদি। তারপর থেকে ক্রমেই বিশ্ব সন্ত্রাসের মাথা হয়ে উঠেছিল আইএস। বাগদাদির মৃত্যুর খবরে তাই স্বভাবতই স্বস্তিতে সন্ত্রাসদীর্ণ রাষ্ট্রগুলি–সহ গোটা বিশ্ব।
গোপন সূত্রে খবরটি আসে ইরাক ও সিরিয়া জুড়ে থাকা কুর্দ বাহিনী থেকেই। বৃহস্পতিবার মার্কিন গোয়েন্দারা খবর পান বাগদাদিকে উত্তর–পশ্চিম সিরিয়ার ইডলিবে পাওয়ার ‘প্রবল সম্ভাবনা’ রয়েছে। শুক্রবারের মধ্যেই সেনা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে মার্কিন প্রশাসন। শনিবার সকালে ইডলিবে অভিযান চালানোর মতো নির্ভরযোগ্য তথ্য পান মার্কিন গোয়েন্দারা। ইডলিবের বারিশা এলাকায় আইএসের ওই ঘাঁটিতে সপরিবারে রয়েছে বাগদাদি। তার সঙ্গে রয়েছে এক দল আইএস জঙ্গিও। ঘণ্টাখানেকের অভিযানেই শেষ হয়ে যায় গোটা দুনিয়ার ত্রাস, আইএস জঙ্গি প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি। মার্কিন বাহিনীর হামলার তীব্রতার সামনে ভেঙে পড়ে আইএস প্রধানের প্রতিরোধ।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরডোগান টুইটারে লিখেছেন, ‘‌আইএস নেতার মৃত্যু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ অভিযানের পক্ষে টার্নিং পয়েন্ট। আগের মতোই তুরস্ক সন্ত্রাসবাদ দমনকে সমর্থন করে যাবে। আমি আত্মবিশ্বাসী, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই একত্রিত লড়াই মানবতার কাছে শান্তি ফিরিয়ে আনবে।’‌