লিড নিউজ

২০২১ সালের নির্বাচনের লক্ষ্যে রণনীতি মমতার

লোহা গরম থাকতে থাকতেই তাতে আঘাত করতে চাইছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ উপনির্বাচনে হ্যাট্রিকের সাফল্যে আনন্দে গা ভাসিয়ে না দিয়ে বরং উন্নয়নের পাহাড় করতে চাইছেন তিনি। তাই আগামী বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে রাজ্যের জন্য একটি সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে চাইছে নবান্ন। উদ্দেশ্য, বাংলাকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে তুলে ধরা। তাই বাংলার জন্য এমন উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি দপ্তরকে।
ইতিমধ্যেই বিজয় মিছিলে মানা করে বিনয়ী হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। তিনিও জানেন কেন্দ্রের শাসক দলের সঙ্গে একুশের লড়াই কঠিন। আর তাই বাস্তবের জমিতেই পা রাখতে চাইছেন নেত্রী। কারণ ১৮টি আসন নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে ধাক্কা দিতে সক্ষমও হয় বিজেপি। স্লোগান ওঠে, ঊনিশে হাফ, একুশে সাফ। কিন্তু উপনির্বাচনে বিজেপিকে সাফ করলেন তৃণমূল নেত্রী। ফল ৩–০। কিন্তু জয়ের আনন্দে দল যাতে লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্যের জন্য একটি সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে বিভিন্ন দপ্তরের সচিব পর্যায়ের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। সেখানে মোট ১৭টি দপ্তরের সচিবরা হাজির ছিলেন। বৈঠকে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মুখ্যসচিব জানিয়ে দেন, শুধু গতানুগতিক ছকে বাঁধা কাজ করলে হবে না। বাংলাকে গোটা দেশের সামনে উন্নয়নের মডেল করে তুলে ধরতে উদ্ভাবনী উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। কীভাবে সেটা করা যেতে পারে, তার পথও বাতলে দিয়েছেন মুখ্যসচিব। তার মধ্যে অন্যতম হল, কলকাতার সঙ্গে বিভিন্ন জেলার দূরত্ব ঘোচাতে এবং এক জেলার সঙ্গে অন্য জেলার যাতায়াতের পথ আরও মসৃণ করতে ডেডিকেটেড রোড বা পৃথক সড়ক তৈরি। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পূর্ত দপ্তরকে।
এদিকে জনসংযোগে কোনও ভাটা দিচ্ছে না তৃণমূল। সামনেই রাজ্যজুড়ে পুরসভাগুলির ভোট। রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, মানুষের কাছে যেতে হবে। সমস্যা বুঝতে হবে। কোথাও বিরোধীদের আক্রমণ করা হবে না। শুধু মানুষের কাছে যাওয়ার মন্ত্র নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পুরসভাগুলির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে শহরে জঞ্জালের পাহাড়। পুরসভার জঞ্জাল অপসারণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে নগরোন্নয়ন দপ্তরকে। কলকাতা, হাওড়া, সল্টেলেক, শিলিগুড়ির মতো শহরের উপর চাপ কমাতে এবং যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে রাজ্যের কোথায় কোথায় ‘স্মার্ট সিটি’ গড়ে তোলা যায়, সেটা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। তার জন্য কী ধরনের পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে, তার পরিকল্পনা তৈরির জন্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
অন্যদিকে তারুণ্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতাকে আরও জোরদারভাবে মেলাতে হবে। তার জন্য দিদিকে বলো প্রচার চলবে। এনআরসি নিয়ে জোরকদমে প্রচার অব্যাহত থাকবে। মানুষকে এনআরসি’‌র বিপদ সম্পর্কে সচেতন করা হবে।
সামনেই পুরভোট। ধাপে ধাপে এগোতে চাইছে তৃণমূল। কৌশলের অন্যতম হাতিয়ার যে এনআরসি, তা স্পষ্ট।