চোখের বালি থেকে নয়নের মণি। পরিস্থিতি বদল হওয়ায় এখন এই ছবিই ধরা পড়েছে। মন্ত্রিসভার দখল নিতে লোকহিত পার্টির সেই বিতর্কিত বিধায়ক গোপাল কান্ডার উপরেই আপাতত নির্ভরশীল অমিত শাহ এবং বিজেপি। একদা তিনিই ছিলেন চোখের বালি। যা হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে নয়নের মণি হয়েছেন তিনি। কারণ হরিয়ানায় বিজেপি সরকার গড়তে যে ছয় বিধায়কের সাহায্য পেতে মরিয়া তাঁদের অন্যতম ‘কিংমেকার’ গোপাল কান্ডা।
পূর্ব রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, কয়েক বছর আগে জোড়া আত্মহত্যার জেরে গোপাল কান্ডাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে পথে নামে বিজেপি। ২০১২ সালের ৫ আগস্ট দিল্লির অশোক বিহারের বাড়িতে আত্মঘাতী হন তাঁর মালিকানাধীন উড়ান সংস্থায় কর্মরত বিমানসেবিকা গীতিকা শর্মা। সুইসাইড নোটে তিনি কান্ডা ও তাঁর এক কর্মচারী অরুণা চাড্ডার বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করে যান। পরে ধর্ষণ, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং অপরাধমূলক অভিসন্ধির দায়ে কান্ডাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর আসল মুখ চিনিয়ে দিতে হরিয়ানার মহিলা মোর্চাকে নির্দেশ দেন বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি।
এই নতুন সমীকরণকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, ‘যারা নৈতিকতার ধার ধারে না, সরকার গড়তে তাঁদের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে বিজেপিকে।’ গোপাল অবশ্য নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়ে জানান, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই হরিয়ানা উন্নয়নের দিশা পাবে। তাই সব নির্দল বিধায়কই নি:শর্তে তাঁর হাত ধরতে চলেছেন। গোপাল কান্ডা এবং সাত নির্দল বিধায়কের সঙ্গে কথা বলতে দিল্লিতে পৌঁছেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে জামিনে মুক্তি পান কান্ডা। মে মাসে ভাই গোবিন্দ কান্ডার সঙ্গে তৈরি করেন লোকহিত পার্টি। ওই বছরেই সেপ্টেম্বর মাসে অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত থাকা অবস্থায় হরিয়ানা বিধানসভার চলতি অধিবেশনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু অবৈধ জমি দখল সম্পর্কিত একটি সিডি জনসমক্ষে আসার পরে তাঁকে বহিষ্কারের দাবিতে সরব হয় তখন বিরোধী আসনে বসা বিজেপি।
৯০ আসনের হরিয়ানা বিধানসভায় ৪৬টি আসন পেলে নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতায় পৌঁছনো যায়। বিজেপি ২০১৪ সালে ৪৭টি আসনে জিতেছিল। এবার পাওয়া গিয়েছে মোট ৪০টি আসন। এই অবস্থায় সরকার গড়তে ছ’জনের সমর্থন চাই। ঠেকায় পড়ে এই মুহূর্তে বিতর্কিত গোপাল কান্ডার উপরেই চরম নির্ভরশীল। ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় প্যাঁচে পড়া পদ্মশিবির থেকে ফায়দা তুলতে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন চতুর কান্ডাও। নির্বাচনী ফল ঘোষণার পরেই তিনি বিজেপির প্রতি নিজের সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
