প্রবল শ্বাসকষ্ট, চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর, ভুগছেন অ্যানিমিয়াতেও। কিছুদিন আগেই ঘুরে এসেছেন হাসপাতাল থেকে। তাতে কী! আদ্যোপান্ত কমিউনিস্টের মস্তিষ্ক তো পুরোপুরি সচল। তাই নিয়েই দাঁড়াতে হবে প্রিয় পার্টির পাশে। প্রতিকূলতার মধ্যেই চীন নিয়ে নতুন বই লিখলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যতদিন হাসপাতালে ছিলেন, চিকিৎসকদের বারবার প্রশ্ন করতেন, কবে ছুটি পাব? তাঁর যে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। অসুস্থতার ভ্রুক্ষেপ না করেই পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট কক্ষে ফিরে আসেন তিনি। এখনও একটি বই অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে তার আগে প্রকাশ হচ্ছে সদ্য সমাপ্ত হওয়া ‘স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’ নামে বইটি।
আসন্ন শারদ উৎসবে সিপিএমের বুক স্টলে পাওয়া যাবে এই বই। মঙ্গোলীয় আক্রমণ ঠেকাতে চীনের অতিকায় প্রাচীর নির্মাণ থেকে এই বিশ্বায়নের যুগে চীনা তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা আলিবাবার বিশ্ব জোড়া দাপট, এক বিশাল ইতিহাসের এই বিবর্তনকে ৭২ পাতার বইতে তুলে ধরেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বইটি ইতিমধ্যেই চলে এসেছে ন্যাশনাল বুক এজেন্সির দপ্তরে। ‘স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা’ শব্দবন্ধ নেওয়া হয়েছে স্ত্রী জিয়াঙ কিঙকে লেখা মাও জে দঙের একটি চিঠি থেকে। বুদ্ধবাবু বইটি উৎসর্গ করেছেন তঁার রাজনৈতিক পূর্বসুরি প্রমোদ দাশগুপ্তকে। লিখেছেন, ‘কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্তকে, যাঁর সঙ্গে প্রথমবার চীনে গিয়েছিলাম এবং চীনেই যাঁর আকস্মিক মৃত্যু হয়েছিল।’ আপাদমস্তক রাজনৈতিক মানুষ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর লেখায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে রাজনীতি আসবে সেটাই স্বাভাবিক।
চীনের রাজনৈতিক ইতিহাস, দুর্নীতি, সংকট, সরকারের আগ্রাসন নীতি এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে শি জিনপিংয়ের ভূমিকা–এসবই দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন তাঁর এই বইয়ে। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছেন বুদ্ধবাবু। যে লক্ষ লক্ষ মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল তার কি বিচার হল? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। নিজের পুলিশ রক্ত চক্ষুর ভয়ে গরিব বাদাম বিক্রেতার দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনেছেন।
অসুস্থ হওয়ার আগেই এই বইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন বুদ্ধবাবু। বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। এখনও আরও একটি বই অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাধ সেধেছে বুদ্ধবাবুর রুগ্ন শরীর। এবারের বইতে তিনি লিখেছেন, চীনের অর্থনীতির ঠিক কী অবস্থা, রাজনীতিতেই বা চীন কতটা শক্তিধর তা নিয়ে গোটা বিশ্বেই মানুষ বিশেষ আগ্রহী। তাই সাধারণ মানুষের মনের প্রশ্নের কাছাকাছি আসতে চেয়েছেন তিনি। মোট ১৩টি অধ্যায়ে সাধারণের বোধগম্য করে বুদ্ধবাবু তুলে ধরেছেন চীনের ইতিহাস, শ্রমিকশ্রেণির উত্থান, কমিউন, সাম্যবাদ, চীনের সাফল্য–সহ ভারত–চীন সম্পর্কের কথাও। আবার চীনের ব্যবস্থায় কোথায় গলদ তাও খুঁজেছেন। ‘চাঁদেরও কলঙ্ক আছে’ শিরোনামে দ্বাদশ অধ্যায়ে লিখেছেন, চীনে পার্টি নেতৃবৃন্দের একাংশের দুর্নীতির কথা। অন্ন–বস্ত্র–বাসস্থানের নিরিখে চীনের বিপুল সাফল্যের পাশাপাশি মানবাধিকার ও পশ্চিমী গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।