অপেক্ষার প্রহরে ইতি পড়ল। ঘৃণ্য অপরাধের সাত বছর পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হল নির্ভয়াকাণ্ডে চার সাজাপ্রাপ্তকে। মধ্যরাতের ক্ষমাভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যায়। শুক্রবার কাকভোরে দিল্লির তিহাড় জেলে ফাঁসি দেওয়া হয় ৪ নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে দোষী–পবন গুপ্তা, মুকেশ সিং, অক্ষয় ঠাকুর এবং বিনয় শর্মাকে।
তবে ফাঁসির ঠিক আগেও চরম নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দিল্লি হাইকোর্টে নতুন করে আবেদন করে এই চার সাজাপ্রাপ্ত। দিল্লি হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে সাজাপ্রাপ্তরা। রাত ২টো ৩০ মিনিটে সুপ্রিম কোর্ট তাদের আবেদন শুনতে রাজি হলেও, তা খারিজও করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ শুনানির পর দোষীদের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেয় বিচারপতি আর ভানুমতী, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এএস বোপান্নার বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের অভিশপ্ত রাত। দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী নির্ভয়া। এক নাবালক–সহ ৬ জন মিলে নারকীয় অত্যাচার চালায় নির্ভয়ার উপর। অত্যাচারের ভয়াবহতায় শিউরে ওঠে সারা দেশ। দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয় গোটা দেশ। প্রতিবাদে রাজধানী–সহ অন্যান্য শহরে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাস, অপরাধের ৭ বছর ৩ মাস পর ফাঁসি হল গণধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ৪ জনের। অভিযুক্ত বাসচালক রাম সিং জেলের ভেতর আগেই আত্মঘাতী হয়েছিল। অভিযুক্ত নাবালক ৩ বছর সংশোধনাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়েছে।
এরপর ফাঁসি হওয়া ছিল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। সাড়ে পাঁচটার কিছু পরে তিহাড় জেলের ডিরেক্টর জেনারেল সন্দীপ গোয়েল ঘোষণা করেন, ‘চার সাজাপ্রাপ্তকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক চার জনকেই পরীক্ষা করেছেন এবং তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেছেন।’ একই প্রসঙ্গে বারবার আদালতের কাছে উত্থাপন করা যায় না। এই মর্মে দোষীদের প্রাণভিক্ষার শেষ আবেদন খারিজ করে দেয় ৩ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এরপরই পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ভোর সাড়ে ৫টায় ফাঁসির সিদ্ধান্তই বলবৎ থাকে। ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে ৪ দোষীকে ফাঁসির জন্য নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাদের শারীরিক পরীক্ষা হয়। তারপর ভোর সাড়ে ৫টায় দিল্লির তিহাড় জেলে ফাঁসি দেওয়া হয় ৪ দোষীকে। নির্দিষ্ট সময় পর তিহাড় জেলের ডিরেক্টর সন্দীপ গোয়েল ৪ জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই খবর পাওয়ার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন নির্ভয়ার মা আশা দেবী। তিনি বলেন, ‘এত দিন ধরে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আজ আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য নতুন সকাল। পিশাচগুলোর অবশেষে ফাঁসি হল। দেশের মেয়েরা বিচার পেল।’