পুরো নামটি বলার দরকার পড়ত না। ফুটবল দুনিয়া পরিচিত ছিল তাঁর পোশাকি নামেই। ভারতীয় ফুটবলের উত্থানের ইতিহাসে আগাগোড়া জড়িয়ে রয়েছে পি কে নামটি। সেই প্রদীপ আজ নিভে গেল। প্রয়াত কিংবদন্তি প্রাক্তন ফুটবলার পি কে ব্যানার্জি। শুক্রবার দুপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় ফুটবলের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি হল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। একমাস ধরেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পি কে ব্যানার্জি।
ফুটবলার থেকে কোচ ভারতীয় ফুটবলে তার অবদান অনস্বীকার্য। ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক আঙিনায় ভারতের নাম তুলে ধরার ক্ষেত্রে যেমন অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তেমন কোচ হিসেবে ভারতীয় ফুটবলে জন্ম দিয়েছেন একাধিক দিকপাল ফুটবলারের। ফুটবল ইতিহাসের মাইলস্টোনের অপর নাম পিকে ব্যানার্জি। গত ৩ মার্চ পি কে–র শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন তিনি। মূলত ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়েই তিনি বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। যদিও আরও একাধিক শারীরিক সমস্যা ছিল । ডায়ালিসিসও চলছিল। তবে গত সোমবার বিকেল থেকে তাঁর অবস্থার ফের অবনতি হয়।ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। হাসপাতালের তরফে সোমবার রাত ৯টা নাগাদ এক মেডিক্যাল বুলেটিনে বলা হয়, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন না প্রাক্তন ফুটবলার। এদিন নিঃশব্দে চলে জীবনের মাঠ ছাড়লেন তিনি।
ছাত্রজীবন থেকেই ফুটবল আর পিকে একে অন্যের পরিপূরক। তাই মাত্র উনিশ বছর বয়সে ১৯৫১ সালে বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে খেলার সুযোগ পান ভারতীয় ফুটবলের এই প্রতিভাবান স্ট্রাইকার। তিন বছর বিহারের হয়ে ফুটবল খেলার পর ১৯৫৪ সালে কলকাতায় চলে আসেন পি কে ব্যানার্জি। ততদিনে ফুটবলার পি কে–র নাম আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার দুপুরে মারা যান পি কে ব্যানার্জি। হাসপাতালের তরফে জানানো হয় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছেন তিনি। ইস্টার্ন রেলের হয়ে দাপটে খেলেছেন। ভারতীয় ফুটবল দলের হয়ে অলিম্পিক, এশিয়াডে অংশ নিয়েছেন। কোচ হিসেবে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে একাধিক সাফল্য এনে দিয়েছেন পি কে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘কিংবদন্তি ফুটবলার ও কোচ প্রদীপ কুমার ব্যানার্জি (পি কে ব্যানার্জি)–র প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি।’
১৯৫৫ সালে মাত্র উনিশ বছর বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। আটদলীয় একটি আন্তর্জাতিক টুর্ণামেন্টে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। পি কে ব্যানার্জি বাংলার ফুটবলে একমাত্র ব্যক্তি ফুটবলার হিসেবে যেখানে জন্ম সেখানেই মৃত্যু। অর্থাত্ মোহনবাগান কিংবা ইষ্টবেঙ্গলের মোহকে দূরে সরিয়ে সারাজীবন ইস্টার্নরেলেই খেলে গিয়েছেন। এখানে খেলেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ভারতীয় ফুটবলে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। এছাড়া তিনি অর্জুন পুরস্কার, পদ্মশ্রী, ফিফা অর্ডার অফ মেরিট, এশিয়ান গেমস স্বর্ণপদক সহ অজস্র সম্মান ও পুরস্কার পান।
