রাজ্য

মায়ের হাতে খুন শিশুকন্যা!‌

মায়ের হাতে খুন হল দু’‌মাসের শিশুকন্যা। নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সন্ধ্যা মালো নামে এক মহিলাকে। রবিবার বেলেঘাটা এলাকার সিআইটি রোডে এই ঘটনা ঘটেছে। মুখে–গলায় সেলোটেপ পেঁচিয়ে নৃশংসভাবে নিজের দু’মাসের শিশুকন্যাকে খুন করেছিলেন ওই মহিলা! অত্যন্ত নিখুঁতভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই কাজ সেরে ফেলেছিলেন তিনি। তারপর দিনভর পরিবারের কাছে এবং পুলিশের কাছে মেয়ে চুরি যাওয়ার নাটক করে গিয়েছেন।
রবিবার দুপুরে শিশু অপহরণের খবরে চাঞ্চল্য ছড়ায় বেলেঘাটা সিআইটি রোডে। খবর পাওয়া যায়, আবাসনে ঢুকে, মাকে বেধড়ক মারধর করে দু’‌মাসের কন্যাসন্তানকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ দায়ের করা হয় থানায়। শিশুটির মা জানায়, ঘটনার সময়ে ছাদে ছিলেন আয়া, এমনকী নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন না আবাসনে। সেই সুযোগেই শিশুকে তুলে নিয়ে চলে যায় দুষ্কৃতী। প্রথমে চড় মারতেই অচৈতন্য় হয়ে যায় সন্ধ্যা সেই ফাঁকেই শিশুকে নিয়ে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় তদন্ত। বেলেঘাটায় পুলিশের ইএসডি ডিভিশনের সদর দপ্তরের কাছে একটি বহুতলে (মহল্লা অ্যাপার্টমেন্ট) এই নৃশংস ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে বেশ কিছু সন্দেহজনক তথ্য পায়। পর পর জিজ্ঞাসাবাদে ভেঙে পড়ে হত্যাকারী মা। পরে আসল ঘটনা জানতে পারে পুলিশ। তখনই বহুতলের পেছন দিক থেকে উদ্ধার করা হয় শিশুর নিথর দেহ। পরে পুলিশের কাছে নিজের দোষ কবুল করেন ওই মহিলা। কেন ওই মহিলা নিজের কন্যাসন্তানকে খুন করলেন? পুলিশ জেরা করার পর মনে করছে, কন্যা সন্তান হওয়ার হতাশায় এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
পুলিশ সূত্রে খবর, অপহরণকারীর স্কেচ কল্পনাপ্রসূত ছিল বলেই সন্দেহ হয় পুলিশের। আশপাশের ২০টি সিসিটিভি দেখেও সন্ধ্যাদেবীর কথার সঙ্গে অর্থাৎ সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কোনও সাদা ট্রাউসার পড়া যুবককে ওই আবাসনের আশপাশেও দেখা যায়নি। এতেই পুলিশের সন্দেহ দৃঢ় হয় যে সন্ধ্যাদেবী মিথ্যে বলছে। টানা জেরাতে শেষ পর্যন্ত খুনের কথা কবুল করে সন্ধ্যা মালো। এরপর শুরু হয় ম্যারাথন জেরা। সেখানে সন্ধ্যাদেবী স্বীকার করেন, শ্বাসরোধ হয়ে শিশুর মৃত্যু হলে আবাসনের পেছনে ড্রাই ম্যানহোলে ফেলে আসেন দেহ। আয়া তখন ছাদে ছিলেন। শিশুকে ফেলে এসে ড্রইং রুমে ফ্রিজের সামনে ফের শুয়ে পড়েন। শ্বশুর ঢুকলেই অপহরণের গল্প ফাঁদেন তিনি। স্বামীকে দুপুর ১২টা নাগাদ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে যেতে বলে। পুলিশের কাছে নিজেই এই কথা জানিয়েছে সন্ধ্যার স্বামী। পাশাপাশি ম্যানহোলে সন্তানকে ফেলে এসে দেওয়ালে নিজের মাথা ঠুকেছিল সন্ধ্যা। যাতে মারধরের ক্ষতচিহ্ন দেখানো যায়। একথা উঠে এসেছে সন্ধ্যার বয়ানে। এখন প্রশ্ন উঠছে, মানসিক অবসাদ নাকি পরকীয়া?‌ কিসের জন্য কন্যাসন্তান হত্যা?‌ উত্তর খুঁজছে পুলিশ।