লিড নিউজ

বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতরা কারা?‌ উঠছে একাধিক প্রশ্ন

যাদবপুর সাংসদ নিগ্রহ কাণ্ডে উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন। কারণ সাংসদকে নিশ্চয়ই তাঁর দলের ছাত্র সংগঠন নিগ্রহ করবে না। তাহলে কারা নিগ্রহ করল?‌ কারা এসএফআইয়ের ইউনিয়ন রুম ভাঙচুর করল?‌ নিগ্রহের সময় কলকাতা পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল কেন?‌ এই প্রশ্নগুলি এখন তুলছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একাংশ এবং ছাত্রছাত্রী মহল। উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গিয়েছে, তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি এই গোটা ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে। কিন্তু লড়াইটা হয়েছে এসএফআই বনাম এভিবিপি। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই এই বিশ্ববিদ্যালয় এসএফআইয়ের দখলে রয়েছে। তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল এভিবিপিকে। আর তাদের বহিরাগতরা এসএফআইয়ের ইউনিয়ন রুমে অগ্নিসংযোগ করেছে। পাশাপাশি গোটা সন্ধ্যেবেলা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে তারা। আর তারপর পুরো দোষটাই এসএফআইয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা পুলিশ জানে। আর জানে বলেই যখন এই ঘটনা ঘটছে তখন রাজ্যপালের কনভয়ের সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়কে ক্যাম্পাস চত্ত্বর থেকে বের করে দিতে উদ্যোগী হয়। যেখানে এই ধ্বংসলীলা আটকাতে তাদের পদক্ষেপ করা উচিত ছিল।
ঠিক সেই সময়ের পরিস্থিতি কী ছিল?‌ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের মুখে আটকে পড়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তাঁকে ছাড়াতে ক্যাম্পাসে যান আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার। যা বেনজির ঘটনা। বাবুলের হাত ধরে গাড়িতে তোলেন রাজ্যপাল। কিন্তু রাজ্যপালের কনভয় আটকে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। তাঁদের দাবি, ক্ষমা চাইতে হবে বাবুল সুপ্রিয়কে। ছাত্রছাত্রীদের একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজভবনে এসে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তাবও বিক্ষোভকারীদের দেয় পুলিশ। এরপর কার্যত তাঁদের চোখে ধুলো দিয়ে রাজ্যপালের কনভয় বের করা হয়। আচার্য জগদীপ ধনকার ও বাবুল সুপ্রিয়কে অন্য গেট দিয়ে পুলিশ বের করে দেয়।
তারপর কী দেখা গেল?‌ দেখা গেল, ভাঙচুর চালানো হল গোটা ক্যাম্পাসে। মাথায় হেলমেট পড়ে, হাতে লাঠি নিয়ে ভাঙচুর চালানো হল ইউনিয়ন রুম থেকে শুরু করে অন্যান্য দপ্তরেও। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হল সাইকেল, কম্পিউটার–সহ একাধিক জিনিসে। আটকে দেওয়া হল দমকলের গাড়ি। এই বহিরাগতরা কারা? মুখে না বললেও সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই এভিবিপির বহিরাগত। এমনকী গোটা ক্যাম্পাসজুড়ে যখন সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাঁরা, তখন পুলিশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
হেলমেট মাথায় ভাঙচুর চালালো–আগুন জ্বালাল তারা যে বহিরাগত, সে বিষয়েও দ্বিমত নেই। ফলে প্রশ্ন উঠছে, কোনওরকম বিক্ষোভের মুখে বাবুল সুপ্রিয়কে পড়তে হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ করা হবে, সেটা কি পরিকল্পিত? কারণ সূত্রের খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন রাজ্যপাল। তাঁকে ক্যাম্পাসে না যাওয়ার অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারকে একটু সময় দিতে আর্জি জানান। কিন্তু রাজ্যপাল তা না শুনে বিজেপি নেতাকে সাহায্য করতে পৌঁছে যান।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, এখানে টিএমসিপি বা পুলিশ জড়িত ছিল না। রাজ্য সরকার তাঁদের নিরাপদে বের করে এনেছে। ইউনিয়ন রুমে শুধু ভাঙচুর চালানোই নয়, চে গেভারা’‌র ছবিতে কালি লাগিয়ে দেওয়া হয়। ছবি এবং মূর্তিকে বিকৃত করা হয়। বামপন্থীরা তো নিজের হাতে এটা করবে না। তা করেছে এভিবিপির বহিরাগতরা। যারা ছবিটা কার চিহ্নতেই পারেনি। মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। অগ্নিমিত্রা পলের শাড়ি–ব্লাউজ ছিঁড়ে দেওয়ায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি শুক্রবার রাস্তায় নামবে। এসএফআই ধিক্কার মিছিল করবে। তবে কলঙ্কিত হল শিক্ষাঙ্গন বলে বার্তা গেল সর্বত্র বলে মনে করা হচ্ছে।