খুব বেশিদিনআগের কথা নয়। কাঠফাটা রোদে আপনাকে একবার দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা আপনার কলেজেরসামনে দাঁড়িয়ে থাকতো আপনার প্রেমিক। একান্ত নিভৃতে হাতের উপর হাত রেখে ‘তুমিই আমারজীবন’ বলতেই স্বপ্নের দেশে হারিয়ে যেতেন আপনি। প্রায়ই ফুল, কবিতার বই আর চকলেটউপহারে মনে তখন খুশির হিন্দোল। আর রাত হলেই ফোনে ভালোবাসার আলাপন। আপনার রূপেরপ্রশংসা করতেই কেটে যেত অর্ধেক সময়। একদিন দেখা না করতে পারলেই মুখ ভার হয়ে যেতআপনার প্রেমিকের।
আপনি ভাবতেনভবিষ্যতেও এমন রঙিন হবে আপনার দিনগুলো। কিন্তু কোথায় কী! পাঁচ বছর আগের প্রেমিকএখন আপনার স্বামী। সম্পর্ক বদলের সঙ্গে সঙ্গে আপনার নায়ক কেমন যেন মিইয়ে গেল।রোমান্স তো দূরের কথা, একবার মুখের দিকে তাকানোরও সময় নেই তার। সকাল সকাল অফিসেবের হওয়া, ফিরেই দু-একটা কাজের কথা, তারপরই টিভি কিংবা মোবাইল ফোন নিয়ে বসে যাওয়া।এক কথায় বলতে গেলে আগেকার সেই উত্তাপ, উদ্দীপনা, উৎসাহ কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
বিয়ের পরসম্পর্ক নতুন মোড় নেয়। প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে রাতারাতি সম্পর্ক হয়ে যায়স্বামী-স্ত্রীর। মেয়েরা যত তাড়াতাড়ি এই পরিবর্তনটা মেনে নিতে পারেন, ছেলেরা তাপারেন না। নতুন সম্পর্ক, নতুন দায়-দায়িত্বে অভ্যস্ত হতে গিয়ে প্রেম অদৃশ্য হতেথাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রেম যেন প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়ার হাতিয়ার মাত্র। কাজহাসিল হলেই তাই দেখা দেয় গা ছাড়া ভাব। অন্যদিকে মেয়েরা মনে করেন রোমান্স থাকবেআজীবন। এখানেই ছেলে আর মেয়েদের মানসিকতার তফাত। কথায় আছে, বিয়ের আগে ছেলেরামেয়েদের তোয়াজ করে, আর বিয়ের পর ছেলেদের পেছন পেছন ছুটতে হয় মেয়েদের।
ছেলেদেরদৃষ্টিভঙ্গি অবশ্য একেবারেই আলাদা। তাদের মতে, বিয়ের পর মেয়েরা এতটাই পাল্টে যায়যে, তারা প্রেমিকার সঙ্গে স্ত্রীকে মেলাতে পারেন না। প্রেমের সময় যেখানে মেয়েরা সাজগোজ,পোশাকআশাকের দিকে নজর দিত, বিয়ের পর সেই অভ্যাসটাই পাল্টে যায়। নিজেকে আকর্ষকদেখানোর আর কোনও চেষ্টাই থাকে না। ঢিলেঢালা ম্যাক্সি আর আলুথালু চুলের স্ত্রীরসঙ্গে পরিপাটি প্রেমিকাকে কিছুতেই ছেলেরা মেলাতে পারেন না। তাদের আচরণেও চলে আসেএকটা ভারিক্কি ভাব। প্রেমিকার আগের সেই ব্যাপারগুলো মিস করেন অনেক পুরুষ। সুতরাংসম্পর্কে রোমান্সের অভাবের জন্য ছেলেদের দিকে এককভাবে আঙুল তুললে তা পক্ষপাতিত্বহয়ে যাবে।
বিয়ে মানেইএকসঙ্গে লম্বা পথচলার শুরু। মান-অভিমান, প্রেম-ভালোবাসা, হাসি-কান্না মিলিয়ে যেসম্পর্ক তাকে সযত্নে লালন করতে হবে। স্বামীর সেই প্রেমিক রূপটা বাইরে বের করে আনারদায়িত্ব কিছুটা আপনার উপরও বর্তায়।
১। আপনি নিজেযদি বিয়ের পরও প্রেমিকা হয়ে থাকতে পারেন, তাহলে স্বামীর মধ্যেও বিয়ের আগের ছবিদেখতে পাবেন। বিয়ে মানেই কোনও দাঁড়ি বা ফুলস্টপ নয়। তাই প্রেমের সময়ও যেভাবে আবদারকরতেন, তা বজায় রাখুন।
২। নিজেরচেহারার আগেও যেভাবে যত্ন নিতেন, কাজের ফাঁকে এসএমএস করতেন সেগুলো বন্ধ করে দেবেননা।
৩। প্রশংসা বাউৎসাহ দাম্পত্যে নতুন ছোঁয়া আনে। ছোট ছোট কাজের জন্য সঙ্গীর প্রশংসা করুন। ছোট ছোটউপহারও মাঝে মাঝে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
৪। নিজেরসবকিছু উন্মুক্ত করে দেবেন না। স্বামীকে সুযোগ দিন আপনাকে জানবার। এটা প্রেম জিইয়েরাখার অব্যর্থ ওষুধ।
৫। সময়েরসঙ্গে সঙ্গে রোমান্সের চেহারাও বদলায়। বিয়ের পর ভালোবাসা মানেই হাত ধরাধরি করেঘোরা বা ফুচকা খাওয়া নয়। তার সঙ্গে মিশে যায় স্বামীর আপনার প্রতি দায়িত্ববোধ,দায়বদ্ধতা, আপনার সুরক্ষা আর স্বাচ্ছন্দের প্রতি নজর। সুতরাং মুখে প্রেমের বুলি নাআওড়ালেও আপনার প্রতি তার ভালোবাসার হয়তো খামতি নেই। সেই না বলা ভাষাটা বুঝে নেওয়ারচেষ্টা করুন।
গাড়ি যেমনচাকা ছাড়া চলতে পারে না, তেমন সংসার মসৃণভাবে চালাতে গেলে স্বামী স্ত্রী দুজনেরদায়িত্বই সমান। তাই সম্পর্কের ওম বজায় রাখতে পুরুষদেরও আসতে হবে এগিয়ে। প্রেমেরসময় অতিরঞ্জন আর বিয়ের পর অবহেলা এমনটা যেন না হয়। ভালোবাসলে মাঝে মাঝে তা বোঝানোওজরুরী। আবার প্রেম মানেই অন্ধ আনুগত্য নয়। তাই দাম্পত্যে সিনেমাটিক রোমান্স থাক বানা থাক, একে অপরের প্রতি নিঃস্বার্থ কমিটমেন্টই বিবাহিত জীবনে প্রেমের পরিভাষা।