বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শুনেই ঘুম ভাঙল বাঙালির। শরতের ভোর, শিউলি ফুল, ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু আর আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়ানো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্রপাঠ- বাঙালি মননে গেঁথে থাকা এক প্রাক শারদের মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হল। আর এর সঙ্গেই মিশে রয়েছে সর্বধর্ম সমন্বয়। এটাই বাংলার রীতি–সংস্কৃতি। মহালয়ার বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান, যাঁর রচয়িতা বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য ওরফে বানীকুমার তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র। কিন্তু এই অনুষ্ঠান করার আগে, যখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে তিনি চণ্ডীপাঠের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তখন নাকি খানিক দ্বিধায় ভুগছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তিনি কায়স্থ, তাঁর মুখে চণ্ডীপাঠ শুনলে বামুনরা সব খেপে যেতে পারে। তখন বাণীকুমার বলেছিলেন, এতে ভয় পাওয়ার কী আছে। এই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত শিল্পীরা সকলে বামুন তো নয়ই এমনকী হিন্দুও নন। এই অনুষ্ঠানে আদিযুগে বাজাতেন মুন্সী (সারেঙ্গি), আলী (চেলো), খুশী মহম্মদ (হারমোনিয়াম), অবনী মুখোপাধ্যায় এবং তারকনাথ দে (বেহালা), সুরেন পাল (ম্যান্ডোলিন), সুজিত নাথ (গিটার), দক্ষিণামোহন ঠাকুর (এসরাজ), শান্তি ঘোষ (ডবল বাস্), রাইচাঁদ বড়াল (পিয়ানো ও অর্গ্যান)৷
অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের আরাধনার যে সূচনা পর্ব, যা শুনে আজও মানুষ শিহরিত হন, তার রচনায় স্থান করে নিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মুসলিম। শোনা যায়, ভক্তিভাবে তাঁদের গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত বাণীকুমার থেকে শুরু করে হিন্দু ধর্ম ও শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞরা। প্রভাতী অনুষ্ঠানের সকালে সকল শিল্পীরা স্নান করে, একেবারে শুদ্ধভাবে অনুষ্ঠানে বসতেন। হয়ত সেই ভক্তির মধ্যে অন্ধ ধর্মানুসঙ্গ ছিল না। তাই সেদিন এই যন্ত্রশিল্পীদের মেনে নিতে কোনও অসুবিধা হয়নি। কারণ, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
পূর্বপুরুষকে আহ্বান জানিয়ে তর্পণ করতে নেমেছেন সকলে। রাত থেকেই ওই সব ঘাটে ভিড় জমিয়েছেন। ভোর থেকে পা ফেলার জায়গা নেই বাগবাজার, শোভাবাজার, আহারিটোলার ঘাটে। বিভিন্ন জেলাতেও একই ছবি ফুটে উঠেছে। তার মধ্যে আজ বাগবাজারে গঙ্গা ঘাটে তর্পণ করলেন বিজেপি সর্বভারতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি জেপি নাড্ডা। যে সব বিজেপি কর্মী রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে বাগবাজার ঘাটে তর্পণ করলেন তিনি। সমাজের বিভিন্ন আচার, সংস্কার, বিশ্বাস, মূল্যবোধের সঙ্গে জড়িয়ে রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন জেপি নাড্ডা। যদিও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে প্রচার করি না। মাকে যে ভালবাসে সে বাইরে গিয়ে বলে না।’