বাংলাদেশ

ঢাকা ছেড়েছেন এক কোটি!‌

মোবাইল অপারেটরদের হিসেব অনুযায়ী, ২৬শে মার্চের আগেই এক কোটি সিম ঢাকা থেকে সরে গিয়েছে দেশের অন্যত্র। সেদিন থেকেই ট্রেন–বাস–লঞ্চ–সহ সাধারণের গণপরিবহণ বন্ধ। ঢাকার সেই অতি বিখ্যাত যানজট উধাও!‌ অতিমারির চোখ রাঙানিতে। সেই সঙ্গে বিদায় নিয়েছে রাজপথে লেন–ভাঙা গাড়ি আর তার জন্য তুমুল চেঁচামেচি, সি এন জির (অটোরিকশ) ঝুলোঝুলি, সাইকেল রিক্সার গায়ের উপর উঠে আসা, গাড়ির জানালায় নাছোড়বান্দা হকারের মুখ। ঢাকা এখন পাখির কলতানে মুখর।
বিজয় সরণি, লেক রোড, রাজারবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর, এমনকী অফিসপাড়া মতিঝিল নিঝুম। নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয় পুলিশ, র‌্যাব আর সেনার হুইসল, গাড়ি আর বুটের শব্দ। সাধারণ মানুষ সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করছেন কিনা, সে ব্যাপারে নজরদারিতে প্রশাসন সজাগ। ঢাকায় পুরোপুরি লকডাউন নেই। তবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, সব বন্ধ।
এই রিক্সা ব্যাপারটা নৌকোর মতোই বাংলাদেশের প্রতীক। আসলে তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বড় শহরকেন্দ্রিক। গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ লোক ঢাকায় এসে বাসা বেঁধেছেন রোজগারের আশায়। ঢাকায় থাকার খরচ অনেক। সবাই জানেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ভিত্তি পোশাক শিল্প, চলতি কথায় যাকে গার্মেন্টস শিল্প বলে। সুতির পোশাক ও জিন্স রপ্তানিতে দেশ দ্বিতীয় নম্বরে, চীনের পরেই। বিলেত–আমেরিকার নামী
ব্র্যান্ডের শোরুমে বেশিরভাগ পোশাকের গায়ে লেবেল সাঁটা— মেড ইন বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা তাই গত ২৫ শে মার্চ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এটা জরুরি পদক্ষেপ। দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য খাবার পৌঁছে দিয়েছে সরকার জেলাশাসকদের কাছে। কিন্তু দিনমজুর, কি ছোট চাষি, তাঁদের বিপুল পরিমাণ লোকসান রোখা মুশকিল। পাবনার যে প্রান্তিক কৃষক তরমুজ ক্ষেতে প্রচুর টাকা ঢেলেছিলেন এই ভেবে যে চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুরে শহরের মানুষকে তরমুজ খাইয়ে বেশ কিছু লাভ হবে তিনি এখন হাপিত্যেশ করছেন। ক্ষেতের তরমুজ ক্ষেতেই শুকোচ্ছে। খবর আসছে নাটোর, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহি, মানিকগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও থেকে। প্রচুর মানুষ জ্বর, সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। সবার হয়তো করোনা সংক্রমণ নয়। কিন্তু আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে।