মতামত

ঘরে থেকে ভালো থাকার এই তো সময়!

ড. মেহতাব খানম

করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ-কষ্টবোধ, আর সারাক্ষণ ঘরে থাকার অস্বস্তিবোধ— সবটা নিয়েই মনটা ভারাক্রান্ত থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা কি সেটা একটু হালকা করার চেষ্টা করব না! অবশ্যই করতে পারি। বরং ঘরে থাকার ফলে কিছু ভালো কাজের সুযোগও কিন্তু আমাদের হাতে এসেছে। এই সুযোগগুলো প্রতিদিন অনায়াসে কাজে লাগিয়ে মনকে ভালো রাখতে পারি। সব বয়সের মানুষের জন্য এটা প্রযোজ্য হতে পারে যার যার মতো করে। ভাবুন—ঘরে থেকে ভালো থাকার এই তো সময়!

এ ক্ষেত্রে একটা হতে পারে প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক মিনিটের জন্য ধ্যানমগ্ন হওয়া। পঞ্চ ইন্দ্রিয়কেন্দ্রিক যেকোনো একটির ওপর নিবিড়ভাবে মনোনিবেশ করে কিছুক্ষণ কাটিয়ে দিন; দেখবেন একটু হলেও ফুরফুরে মনে হবে। আবার ঘরের মধ্যেই ছোট ছোট শরীরচর্চা করতে পারেন; তাতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে। আরেকটি কাজ করা যেতে পারে—পরিবারের একে অন্যের সঙ্গে ভালো কিছু আলাপ করা, গল্প করা। একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে তোলার চেষ্টা করা। অনেকের মধ্যে যদিও এই সময় সারাক্ষণ ঘরে থাকার ফলে মেজাজ খিটখিটে হওয়ার উপসর্গ হতে পারে, সেটাও কিন্তু আবার এই ঘরে থেকেই হালকা করা যায় সহজে। প্রয়োজনে ইন্টারনেটেরও সহায়তা নেওয়া যায়।

আরেকটি বড় কাজের সুযোগ এসেছে এই সময় সারাক্ষণ ঘরে থাকার ফলে। সেটা হচ্ছে—প্রতিদিন নিয়ম করে দূরে থাকা আপনজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন। যেসব আত্মীয় বা বন্ধুর সঙ্গে অনেক দিন ধরে যোগাযোগ করার সময় পাননি, যোগাযোগ করা হয়নি তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন খোঁজখবর নিয়ে, গল্প করে। এতে তাদেরও ভালো লাগবে, আপনার মনও হালকা হবে।

যাঁদের সন্তান আছে তাঁরা এই সময় সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর সবচেয়ে বড় সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু। এই সময় আপনি আপনার সন্তানকে একটু বেশি করে বোঝার চেষ্টা করুন। তার সঙ্গে গল্প করুন। দেখবেন সে যে আপনার নানা ব্যস্ততার ফাঁকে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মনের দিক থেকেও বড় হয়ে উঠেছে সেই অনুভূতি আপনাকে আনন্দ দেবে। আপনিও ভালো থাকবেন, আপনার সন্তানও ভালো অনুভব করবে।

আর শেষ কথা হচ্ছে—যখনই মনে আতঙ্ক ভর করবে তখনই মনকে অন্য কোনো জগতে নিয়ে যাবেন। অতীত কোনো কষ্ট আপনার বর্তমান আতঙ্কের সঙ্গে হয়তো বারবার যুক্ত হতে চাইবে, কিন্তু আপনার বড় কাজ হবে অতীত বা ভবিষ্যতের কোনো আতঙ্কজনক চিন্তাকে মস্তিষ্কে ঠাঁই না দেওয়া। কেবলই বর্তমান নিয়ে থাকুন, বর্তমান নিয়ে ভাবুন। দেখবেন, ভালো থাকবেন অনেকটাই।

লেখক : মনোবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান