বাঙ্গালী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজো। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপুজোর আয়োজন শুরু হবে ৪ অক্টোবর ষষ্টিপুজোরর মাধ্যমে, শেষ হবে ৮ অক্টোবর দশমীপুজোর মধ্য দিয়ে। এ বছর উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজোটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্যক্তি উদ্যোগে। বাংলাদেশের বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়িতে প্রতি বছরের মতো এবারেও চলছে এই পুজোর আয়োজন। গত নয় বছর ধরে বিশিষ্ট শিল্পপতি লিটন শিকদার মহাধুমধামে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছেন। দিন দিন সেখানে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১১ সালে ১৫১টি প্রতিমা নিয়ে এখানে দুর্গাদেবীর আরাধনা শুরু হয়। গত বছর ছিল ৭০১টি প্রতিমা। এবছর এই মণ্ডপে ৮০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
দীর্ঘ ৬ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৫ জন শিল্পী দিন-রাত পরিশ্রম করে দক্ষতায় গড়ে তুলেছেন তথ্যবহুল নানা প্রতিমা। মূল বেদীর সামনে দীর্ঘ সারিতে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন অবতারদের প্রতিমা। সেখানে বিশ্বমিত্রের সঙ্গে শ্রীরাম-লব, তাড়কা-সংহার, মায়ার চক্র দ্বারা হাতির মস্তক কর্তন, শ্রী-কৃষ্ণ কংশের দুষ্টু অনুচরকে বধ, শ্রী-কৃষ্ণ আট সখিদের নিয়ে হলিখেলা, শ্রী-কৃষ্ণ আট সখিদের নিয়ে নৌকা বিলাস, ক্ষিরোদ সাগরের ওপর নারায়ণের অনন্ত শয্যা, অহলা উদ্ধার, রঙ্গভূমিতে দুই রাজকুমার, ধনুক ভঙ্গ, চার কুমারের বিবাহ, পিতার বাক্য পালন, মাঝির ভাগ্য ও চিত্রকূটের সভায় শোভা, মনু-শতরুপাকে বরদান, দেবতাদের প্রার্থনা, দশরথের ভাগ্য, ধনু বিদ্যার অভ্যাস। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানকে আরও শ্রীবৃদ্ধির জন্য মূল মঞ্চের বাইরে পুকুরের মধ্যে বিশাল আকৃতির বাহুবলীর নৌকার মধ্যে অষ্টসখিদের প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। রাতে আলোকসজ্জায় এক নয়াভিরাম দৃশ্য দেখতে পারবেন আগত দর্শনার্থীরা।
খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার হাতিয়ারডাঙ্গা গ্রামের বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় সুনিপুণ কারুকার্যে গড়ে তুলেছেন এমন সব নান্দনিক প্রতিমা। ৪ বছর ধরে তিনি শিকদার বাড়ি প্রতিমা তৈরি কাজ করে আসছেন বিজয় কৃষ্ণ বাছাড়। এ বছর ৮০১টি তথ্যবহুল বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করতে পেরে তিনি ধন্য।
দুলাল কৃষ্ণ শিকদার সর্বপ্রথম বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে ২৫১টি প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু করেন। প্রতিবছর প্রতিমা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ৯ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৮০১টি প্রতিমা। ব্যয়বহুল এই আয়োজনে স্থান করে নিয়েছে উপমহাদেশে সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গাপূজা হিসেবে। দুলাল কৃষ্ণ সম্প্রতি মারা যাওয়ায় মন্দিরের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তার ছেলে শিল্পপতি লিটন শিকদার। তিনি জানান, বাবার স্বপ্ন ও ধর্মীয় এই পূজা সবার সহযোগিতায় চলমান থাকবে। প্রতি বছর দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে ভিন্ন ভিন্ন চমক।