মতামত

আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে…

মো. নজরুল ইসলাম

প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতার এ লাইনটি আজ বেশ প্রাসঙ্গিক। কারণ, গোটা বিশ্ব আজ ভয়াবহ সংকটের মধ্যে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯।

আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উভয়ই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ছোট-বড়, উন্নত ও অনুন্নত কোনো দেশই রক্ষা পাচ্ছে না করোনার ভয়াল থাবা থেকে।

ইলেক্ট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখলে করোনাভাইরাসের চারপাশে একটি রাজকীয় মুকুটের মতো গঠন দেখা যায়। তাই মুকুটের প্রতিশব্দ করোনা থেকে এ নাম দেয়া হয়েছে।

উদ্বেগের বিষয় হল, এ করোনাভাইরাস দ্রুত বিবর্তিত হয় এবং হুটহাট গঠন পাল্টায়। ফলে এখনও প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। তাই আক্রান্তদের মধ্যে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা মারা যাচ্ছেন। এ অবস্থায় বাঁচার উপায় আপাতত একটাই- তা হল, আক্রান্ত না হওয়া। আর আক্রান্ত না হতে চাইলে আপনাকে, আমাকে, সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

নিয়মিত সাবান দিয়ে (অন্তত ২০ সেকেন্ড) হাত ধুতে হবে। যথাযথ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা যাবে না। অতি প্রয়োজন ছাড়া রোগীও বের হতে পারবে না।

কেন আমাদের ঘরে থাকতে হবে, তা একটি সমীকরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি। ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের ১ম দিনে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৩ জন ও ১৫ জন। আর বাংলাদেশে প্রথম দিন মাত্র ১ জন। ২য় সপ্তাহ অর্থাৎ ১৪তম দিনে ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ২২৮ জন ও ৬৮ জন। বাংলাদেশে এ সংখ্যা মাত্র ৪৮ জন। বাংলাদেশের এই কম সংখ্যা দেখে হয়তো অনেকেই খুশি ও আত্মতুষ্টির জোয়ারে ভাসছেন। তাই হয়তো অনেকে সামাজিক দূরত্ব বা হোম কোয়ারেন্টিনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

কিন্তু লক্ষ করুন, ৩৯তম দিনে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ১২২ জন এবং যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা ৬৮ জন থেকে বেড়ে ৮৫ হাজার ৭১২ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ২৭তম দিন অতিক্রম করছে। আল্লাহ্ না করুক, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো ৩৯তম দিনে আমাদের অবস্থাও তো ভয়াবহ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এপ্রিল মাসকে ‘ক্রিটিক্যাল’ বলে অভিহিত করেছে।

বিবিসির ধারণা, বাংলাদেশের ২ মিলিয়ন মানুষ প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। আমরা কেউ জানি না, বাংলাদেশের জন্য কোন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় আমরা যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের পরামর্শ না মেনে চলি, তবে তা হবে আমাদের জন্য আত্মঘাতী।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।