রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে একযোগে মামলা করেছিল শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস। সেই মামলার শুনানিতেই কেন্দ্র–রাজ্য–ফড়নবিশ এবং অজিত পাওয়ারকে নোটিশ দিল সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতি এনভি রামান্না, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চ। সোমবার আবার সকাল সাড়ে ১০টায় মামলাটির শুনানি হবে।
রাজ্যপাল যে বিজেপিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এবং দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করে রাজ্যপালকে যে চিঠি দিয়েছিলেন— দুই চিঠিই সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে শীর্ষ আদালতে জমা দিতে হবে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে। তারপরই সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে সর্বোচ্চ আদালত।
নথি জমা দেওয়ার নোটিশ পেল কেন্দ্র, মহারাষ্ট্র সরকার, দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবং অজিত পাওয়ার। সরকার গঠনের জন্য বিজেপি রাজ্যপালকে যে চিঠি দেয় তা আদালতে জমা দিতে হবে। এনসিপি থেকে ভেঙে আসা বিধায়কদের সমর্থনের চিঠিও পেশ করতে হবে। এমনকী রাজ্যপালের সঙ্গে বিজেপি’র চিঠি আদানপ্রদানের সব নথি পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কংগ্রেস–শিবসেনা এবং এনসিপির পক্ষ থেকে আদালতে সওয়াল করেন দুই বর্ষীয়ান আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং কপিল সিব্বাল। আর সরকারের পক্ষে ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ও মুকুল রোহতগি।
আদালত সূত্রে খবর, কপিল সিব্বাল এবং অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দু’জনেই দ্রুত সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার দাবি জানান। অতীতে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক মামলার উদাহরণ তুলে ধরে দাবি করেন, এই ধরনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত ‘অসাংবিধানিক’ বলেও দাবি করেন তাঁরা। এনসিপি অর্থাৎ শরদ পাওয়ারের সঙ্গে আছেন। তাহলে তাহলে কোন শক্তিতে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি শপথ নেন অজিত পাওয়ার? রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি নিয়ম মেনে শপথগ্রহণ করাননি। তাই ওই শপথগ্রহণ বাতিল করা হোক। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আস্থাভোটের অনুমতি দেওয়ার জন্যেও আবেদন করেন মামলাকারীরা। নাহলে মহারাষ্ট্রে বিধায়ক কেনাবেচা হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা পিটিশনে বলা হয়েছে, রাজ্যপাল বিজেপি’র দাবি মেনে সরকার গঠনের প্রস্তার বিচার করে দেখতে পারতেন। কারণ ১৫৪ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে এনসিপি–কংগ্রেস–শিবসেনার কাছে। অভিষেক মনু সিংভি বলেন, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৪৫ জন বিধায়কের সমর্থন নেই দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সরকারের কাছে। ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী এবং অজিত পাওয়ার উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে ফেললেন। সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে কিনা, সেটা দেখা হল না। উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন। কেন্দ্র সেই নিয়ম এড়িয়ে গিয়েছে ১৯৬১ সালের একটি আইনকে হাতিয়ার করে। সেই আইন অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে কপিল সিব্বাল বলেন, মহারাষ্ট্রের মানুষ একটি সরকার চায়। শিবসেনার হাতে সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় বিধায়ক রয়েছে। সোমবারই তা বিধানসভায় প্রমাণ করতে পারে শিবসেনা। আদালতের উচিত আস্থাভোটের নির্দেশ দেওয়া। বিজেপি’র যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে তাহলে তার তা প্রমাণ করুক। না পারলে শিবসেনাকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হোক। যদিও সরকারপক্ষের আইনজীবী মুকুল রোহতগি বলেন, শনিবার রাজ্যপাল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। সেই ক্ষমতা তিনি ভোগ করেন। সংবিধানের ৩৬১ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল আদালতে এই নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য নন। তবে এসব কথা কানে তোলেননি বিচারপতিরা।
