শান্তা পড়েছে মহা সমস্যায়। স্বামী আর ছেলের মধ্যে দুই-একটা কথা শুরু হলেই বেঁধে যায় অশান্তি। একজনের চিন্তাভাবনা অন্যজনের থেকে পুরোপুরি আলাদা। প্রতিদিনের ছোটখাট সিদ্ধান্ত থেকে বড়সড় ডিসিশন – যেকোনো বিষয়ই হোক না কেন দুজনের মতামত কখনোই মেলেনা। শান্তা যদি স্বামীকে বোঝাতে যায় তাহলে তিনি বলেন, তোমার আদরেই ছেলে এমন হয়েছে। আর ছেলেকে কিছু বলতে গেলে সে বলে, তুমি সবসময় বাবাকেই সাপোর্ট করো। এইতো সেদিনের ঘটনা, একটা সাইকেল কেনা নিয়ে বাবা-ছেলের এমন অশান্তি বেঁধে গেল যে দুজনের মধ্যে কথাই বন্ধ হয়ে গেল। শান্তা দুজনকেই অনেক বোঝালো। কিন্তু ফলাফল শূন্য। আসলে একজন যে ভুল বলছে তা কিন্তু নয়। দুজনের জায়গা থেকে চিন্তা করে দেখলে দেখা যায়, বাবা-ছেলে দুইপক্ষই তার নিজের দিক থেকে ঠিক। কিন্তু যেকোনো একজনকে তো কিছুটা ছাড় দিতেই হবে। তা না হলে তো এই মতবিরোধের সমাধান কখনোই হবে না।
বাবা আর ছেলে, দুজন দুই ভিন্ন সময়ের প্রতিনিধি। তাই সমস্যা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। একজনের কাছে যা ঠিক মনে হচ্ছে, অন্যজনের কাছে তা একেবারেই অবাস্তব মনে হতেই পারে। দুজনের চিন্তাভাবনার মধ্যে ফারাক থাকবেই। কিন্তু তাই বলে কি এই মতবিরোধ চলতেই থাকবে? মাঝখানে থেকে আপনার আচরণই বা কেমন হবে? চলুন সমস্যা সমাধানের কিছু উপায় বের করা যাক।
আপনার স্বামীর জন্য পরামর্শ
১। সবসময় নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের উপর চাপিয়ে না দেওয়াই ভালো। ওদের ভালো লাগা, খারাপ লাগার দিকেও নজর রাখা উচিত।
২। ভুল থেকেই সবাই শেখে। ভুল করতে দিন। সবসময় কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল বলতে থাকলেই বরং বিরক্তি বাড়বে।
৩। অন্যরকম চিন্তাভাবনা করা মানেই যে তা খারাপ, এটা ভাবা ঠিক নয়।
৪। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে একটু বদলানো উচিত। তাহলে সন্তানকে বুঝতে সুবিধা হয়।
৫। ছেলের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক তৈরি করুন। বন্ধুর মতো পরামর্শ দিলে সন্তান সহজে তা গ্রহণ করবে।
৬। মায়ের সঙ্গে সন্তানের অ্যাটাচমেন্ট অনেক সময় বেশি হয়। তাই সন্তানের মানসিকতা বুঝতে নিতে পারেন আপনার স্ত্রীর সাহায্য।
৭। সন্তানের সামনে অন্য কারো তুলনা টেনে আনলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।
আপনার ছেলের জন্য পরামর্শ
১। বাবার সঙ্গে তর্কে না জড়িয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে বোঝাতে হবে।
২। এটা মনে রাখা উচিত যে বাবা সবসময় সন্তানের ভালোই চান।
৩। প্রত্যেক পরিবারেই কিছু নিয়ম থাকে। নিয়ম ভাঙ্গার মধ্যেই যে বাহাদুরি আছে তা কিন্তু নয়।
৪। বাবাকে প্রতিপক্ষ ভাবা অনুচিত।
৫। মাকে নিজের পক্ষে টেনে আনা ঠিক নয়।
৬। বাবা ব্যাকডেটেড এরকম ধারণা পোষণ না করে তার অভিজ্ঞতার মূল্য দেওয়া উচিত।
আপনার নিজের জন্য পরামর্শ
১। সমস্যা হলে আপনি মধ্যস্ততা করার চেষ্টা করুন।
২। কারো পক্ষে না গিয়ে লজিকালি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন।
৩। দুজনকেই বোঝান যে অন্যজনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া মানেই তার কাছে হেরে যাওয়া নয়।
৪। ছেলে এবং স্বামীকে নিয়ে একসঙ্গে প্রতিদিন কিছুটা সময় কাটান। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে আপনার সহযোগিতা অপরিহার্য।