লাইফস্টাইল

সন্তান যখন টিন এজে

সব কিছুতেই বাঁধা, শুধু খবরদারি তার ওপর বয়সটা যখন ১৫-১৬ তাহলে তো কথাই নেই, এসব নিয়মের বেড়াজাল একদমই ভালো লাগে না। এই বয়সটাই তো বাঁধনছাড়া উল্লাসে মত্ত হতে চায়। সিনেমা দেখতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারা, রাত করে ঘরে ফেরা এই সবই যেন জীবনের মূল মন্ত্র। বাবা-মায়ের মন তো সবসময় আতঙ্কে ভোগে। নিয়মের ব্যতিক্রম মানেই যে সন্তান গোল্লায় গেলো তা কিন্তু নয়। ছেলেমেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করা খুবই স্বাভাবিক, তবে তার প্রতিফলন যদি মারধোর বা বকুনি হয়, তবে ছেলেমেয়ের মধ্যেও বিদ্রোহ করার মনোভাব দেখা দিতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার সন্তান ছোট হলেও ওর নিজস্ব একটা জগত আছে, পছন্দ- অপছন্দ আছে। নিজের চিন্তা-ভাবনা জোর করে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। ওকে স্পেস দিন। তার মানে কী ছেলেমেয়েদের একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করবেন না ? তা নয়, প্রয়োজন সঠিক ব্যালান্সের। নিজেদের পারিবারিক প্রেক্ষাপট, জীবনযাত্রা এবং সন্তানের মানসিকতা অনুযায়ী এমন রাস্তা বেছে নিন, যাতে সবরকম সংঘাত এড়িয়ে ওদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

কী করবেন
ছোটবেলা থেকেই সন্তানের মধ্যে পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, বাড়ি ফেরা সব কিছু নিয়েই একটা ডিসিপ্লিন তৈরি করুন। তবে নিয়ম যেন শুধু সন্তানের ওপরই জারি না হয়। নিয়মের আওতায় আপনাদেরও থাকতে হবে। আপনাদের আচরণে যদি বিচ্যুতি দেখে, তাহলে ওদের ভালো অভ্যাস গড়ে উঠবে না।
পরিবারের মূল্যবোধ ছোট থেকেই ওর ভেতর গেঁথে দিন।
সন্তানকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করুন, ঠিক-ভুল বোঝান। ছোটবেলা থেকে ভুল স্বীকার করতে শেখান এতে মিথ্যা বলার প্রবনতা তৈরি হবে না।
এই বয়সে আত্মমর্যাদা খুব প্রখর থাকে। অন্যায় করলে আপনি অবশ্যই বকবেন, তবে তা অন্য কারোর উপস্থিতিতে নয়।

পড়ালেখা
পড়ালেখা নিয়ে মাথা খারাপ করবেন না। আপনি যদি সারাক্ষণ ওর পড়ালেখার ওপর নজরদারি করেন, তাহলে ওর আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে যেতে পারে। পড়ালেখা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করলে, ওরা পড়ালেখার প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের সামনে পড়ালেখা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলবেন না।
সন্তানের ওপর প্রত্যাশার ভার চাপাবেন না। সবাই ক্লাসে প্রথম হয় না। ভালো ফলাফল নিশ্চয় চাইবেন, তবে তাই যেন পড়ালেখার প্রধান বিষয় না হয়ে দাঁড়ায়।

খাওয়া-দাওয়া
এটা খাবে না, ওটা খাবে না – সবসময় খাবার নিয়ে এমন করা ভালো নয়। শরীরের খেয়াল অবশ্যই রাখবেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শও দেবেন, কিন্তু মাঝে মধ্যে নিয়ম ভাঙতে চাইলে আপত্তি করবেন না।
ছোট থেকেই খাবারের কোয়ালিটি সম্পর্কে সচেতন করে তুলুন।

বন্ধুবান্ধব
বাবা-মায়ের থেকে বন্ধুরা এই বয়সে কাছের হয়ে ওঠে। সন্তান এবং বা-মায়ের মধ্যে অনেক সময় দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। বন্ধুবান্ধব নিয়ে তাই একটু সচেতন হতে হবে। কড়াকড়ি করবেন না ঠিকই কিন্তু আবার নজর রাখতেও ভুলবেন না।
সন্তানের বন্ধুদের সঙ্গে সহজ হবেন। কে কোথায় থাকে, কার বাড়িতে কে কে আছে, তাদের পছন্দ-অপছন্দ জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। পারলে তাদের ফোন নম্বর নিজের কাছে রাখুন।
আপনার সন্তান কোনো প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে জানলে ঘাবড়ে যাবেন না। এই বয়সে একটু আধটু প্রনয়ঘটিত ব্যাপার প্রায় সব ছেলেমেয়ের মাঝেই দেখা যায়। তবে সতর্ক থাকুন। এই বিশেষ বন্ধুটি কে, কোথায় থাকে, কী করে সব জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। সন্তানকে বলে তার সঙ্গে আলাপ করুন। এতে ভালো-মন্দ বিচার করতে পারবেন।