অফিস করে ক্লান্ত হয়ে মাত্রই বাড়ি ফিরেছেন। সন্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বসলেন আপনার শাশুড়ি। স্কুলে টানাটানি করে কারো জামা ছিঁড়ে ফেলেছে কিংবা কাউকে এমন মেরেছে যে আপনাকে ডেকে পাঠালেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের সামনে অপমান, শাশুড়ির একগাদা অভিযোগ এসব সহ্য করতে না পেরে দুমদাম মেরে বসলেন আপনার সন্তানকে।
মানলাম আপনার সন্তান মারকুটে। আপনারও আর ধৈর্য থাকছে না। কিন্তু মারকুটে সন্তানকে এভাবে যদি আপনি সামলাতে চান, তাহলে কিন্তু বিপদ। এখন থেকেই সাবধান হতে হবে আপনাকে। ওকে বুঝুন। হয়ে উঠুন ওর কাছের বন্ধু। কীভাবে সামলাবেন চলুন একটু দেখে নেওয়া যাক।
১। সন্তান মারকুটে হতেই পারে। পৃথিবীর প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ শিশুই মারামারি করে। আপনার সন্তান নিশ্চয়ই টিভিতে বিভিন্ন কার্টুন দেখে। আর এই বয়সের ছেলেমেয়ের স্বভাবটাই এমন- টম এন্ড জেরি, সুপারম্যান কিংবা ছোটা ভীম দেখে সেইরকম হয়ে উঠতে চায়। সমবয়সি অন্য ছেলেমেয়েদের উপর নিজের গায়ের জোর ফলিয়ে হারিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও এই সময় থাকে। তাই ওকে অযথা বকাবকি বা মারধোর করার আগে ওর মানসিকতা বুঝুন। অতিরিক্ত টিভি বা মোবাইল ফোন দেখা কমিয়ে দিন, বিশেষ করে মারদাঙ্গা কিছু দেখা থেকে ওকে বিরত রাখুন।
২। আপনার এনার্জি থেকে আপনার সন্তানের এনার্জি হাজারগুন বেশি। মারামারি, হাত-পা চালানোর মাধ্যমে ও আসলে ওর এনার্জিকেই বের করতে চায়। ওর বিপুল এনার্জি যাতে পজেটিভ দিকে চালিত করা যায়, সেজন্য ওকে ব্যস্ত রাখুন নানা কাজে। সাঁতার, ক্রিকেট বা শারীরিক পরিশ্রম খরচ হয় এমন কিছুতে ওকে ভর্তি করে দিন।
৩। সন্তানের সামনে ও কিছুই পারে না কিংবা ওর অন্য বন্ধু পারে, এমন তুলনা করবেন না। বরং ওর ভালো দিকগুলো তুলে ধরুন।
৪। অনেকসময় শিশুদের মনে কোনও অসন্তোষ থাকলে ওরা মারকুটে হয়ে উঠতে পারে। কারো উপর হয়তো ওর রাগ আছে কিংবা কাউকে হয়তো ও খুব হিংসা করে। কিংবা কারো কাছে এমন একটা জিনিস আছে, যেটা ও পেতে চায়, কিন্তু পাচ্ছে না। সেই হিংসা বা না পাওয়া থেকে জন্ম নেবে রাগ। আর এর ফলাফল মারকুটে আচরণ। তাই আপনি আগে বুঝতে চেষ্টা করুন ওর মারকুটে আচরণের কারণ। তারপর সন্তানকে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
৫। আপনার সন্তান আপনাকে খুব ভয় পাক, এমনটা চাইবেন না। বরং ওর প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। ভালো বন্ধু হলে স্কুলে কী কী হল, কোন বন্ধু বা শিক্ষক ওকে কী বললেন কিংবা বকলেন, সেগুলো দেখবেন ও গড়গড় করে আপনাকে বলে ফেলবে। এমন অনেক কথাই শিশুরা চেপে রাখে যা সে বলতে পারে না কেউ তাকে বোঝে না বলেই। আর এই চেপে রাখা কথা, রাগ, মনখারাপ, অভিমান সবই মারামারির মাধ্যমে বের হয়ে আসে। তাই সবার আগে সন্তানের সঙ্গে সুন্দর বোঝাপড়ার সম্পর্কটা তৈরি করুন।
৬। আজকাল সবাই খুব ব্যস্ত। কিন্তু সারাক্ষণ কাজ করতে করতে সন্তানকে ভুলে যাবেন না। ওকে অবহেলা করা হচ্ছে, ওকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না এগুলো কখনো যেন ওর মনে না আসে। অবহেলার কথা ভাবলেই কিন্তু ওর মনে ধ্বংসাত্মক প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। আর এর থেকেই তৈরি হবে মারকুটে স্বভাব। সন্তানের খেয়াল রাখুন, যত্ন নিন। দেখবেন আপনার আদরে মারকুটে সন্তানও কেমন শান্তশিষ্ট হয়ে যাবে।